রাজধানীর পুরান ঢাকার কাঠের পুলের তনুগঞ্জ লেনের একটি বাসা থেকে সাবরিনা রহমান শাম্মী নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক নারী শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, আত্মহত্যা করেছেন ওই ছাত্রী। বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। যদিও মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, এমন একটি নোট শাম্মী লিখে গেছেন।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৪টায় ঝুলন্ত অবস্থায় ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করি।’
জানা গেছে, সাবরিনা রহমান শাম্মী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম ব্যাচের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি যশোরে চৌগাছার নারায়নপুর। বাবার নাম লিপটন। তিনি চৌগাছা মহিলা কলেজের এইচএসসি ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ঘটনাস্থলের পাশের রুমে থাকা জবির ১৮তম ব্যাচের এক ছাত্রী নিশ্চিত করে জানান, শাম্মীর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রেমের সম্পর্ক ছিল; যার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মন খারাপ ছিল।
একই তথ্য জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক। তিনি বলেন, ‘প্রেমঘটিত কারণে শাম্মী আত্মহত্যা করতে পারেন।’
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার কাঠের পুলের তনুগঞ্জ লেনের দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট বাসায় ১৮তম ব্যাচের ওই ছাত্রী তার মাকে নিয়ে এক রুমে থাকতেন। অন্য রুমে আত্মহত্যা করা সাবরিনা রহমান শাম্মী ও ১৮তম ব্যাচের ওই ছাত্রীর এক বান্ধবী থাকতেন। গত ডিসেম্বরে ওই বান্ধবী বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে ওই রুমে শাম্মী একাই থাকতেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে ১৮তম ব্যাচের ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমরা দুই রুমের ফ্ল্যাটটিতে থাকি। এক রুমে আমি ও আমার আম্মা থাকি। অন্য রুমে ১৭তম ব্যাচের সাবরিনা রহমান শাম্মী আপু ও আমার এক বান্ধবী থাকতেন। কিন্তু গত ডিসেম্বরে আমার বান্ধবী অন্য জায়গায় শিফট হয়। ফলে আপু একাই রুমে থাকতেন।
তিনি আরও বলেন, আমি গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসায় আসি। বাসায় আসার পর বুঝতে পারি শাম্মী আপুর হয়তো মন খারাপ। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে হয়তো কোনো ঝামেলা হয়েছে এটা বুঝতে পারি। তার বয়ফ্রেন্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী।
শাম্মীর রুমের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, শাম্মী আপুর সঙ্গে কথা বলার পর আমি আমার রুমে চলে যাই। পরীক্ষা থাকায় রুমে পড়ছিলাম। আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে পড়া শেষে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আপুর রুমে লাইট জ্বলছে এবং দরজাটা একরকম চাপানো ছিল। রুমে আলো জ্বলছে দেখে রুমের দরজা খোলতেই দেখি উনি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গেই আমি বাড়িওয়ালা ও ৯৯৯-এ কল দিই। পরে সূত্রাপুর থানা পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে শাম্মীর বন্ধু ও বুয়েট শিক্ষার্থী সানিকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভোর ৫টায় ঘটনা শোনামাত্রই আমি সূত্রাপুর থানায় গিয়েছি। প্রাথমিক অবস্থায় জানতে পেরেছি বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আত্মহত্যার নেপথ্যের আসল ঘটনা জানার জন্য এবং কেউ যদি প্রকৃত অপরাধী হয়, তার বিচার নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ মরদেহ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় তার বয়ফ্রেন্ড সানি উপস্থিত ছিল। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, এমন একটি নোট শাম্মী রেখে যায়।