Image description
 

রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় এখন লাইফলাইন হিসেবে কাজ করছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মাত্র ৩০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। তবে আরামদায়ক ও নিরাপদ এই যাত্রায় ব্যাগ হাতে লাইনে দাঁড়ালে অনেক যাত্রীরই 'এটি নেওয়া যাবে না' এমন সতর্কতার সম্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। মেট্রোরেলে নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে এবং ট্রেন-স্টেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) কঠোর নিয়ম চালু করেছে। এই নিয়ম না মানলে টিকিট কেটেও ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না বা জরিমানা করা হতে পারে।

 

ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইট থেকে জানানো হয়েছে যে, ট্রলি ব্যাগ এবং সাধারণ ব্যাগ বহনের ক্ষেত্রে ব্যাগটির দৈর্ঘ্য অবশ্যই ২২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৪ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ৯ ইঞ্চির মধ্যে থাকতে হবে। এছাড়াও, ব্যাগের ওজন কোনোভাবেই ১৫ কেজির বেশি হওয়া যাবে না। বহনযোগ্য ব্যাকপ্যাকগুলো মেট্রোরেলের ভেতরে পিঠে বহন না করে হাতে রাখতে হবে। সব ধরনের মালামালের কার্টুন বহনের ক্ষেত্রেও আকার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে; কার্টুনটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা ১৮ ইঞ্চির চেয়ে বেশি বড় হতে পারবে না। তবে, মেট্রোরেলে নির্দিষ্ট আকারের ব্যাগ ও কার্টুন বহন করা গেলেও সব ধরনের মালামালের বস্তা (প্লাস্টিক, পাট, মোটা কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি) বহন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু জিনিস একদম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে জ্যান্ত পশু-পাখি; কাঁচাবাজারের পণ্য, যেমন কাঁচা মাছ-মাংস-সবজি, শুঁটকি, ডিম—যা থেকে পানি ঝরে বা গন্ধ ছড়াতে পারে; রসালো ফল, যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, আনারস—তবে তা খোলা অবস্থায় বহন করা যাবে না। এছাড়া বিরিয়ানি, পোলাও, মিষ্টির মতো খোলা খাবার, যা থেকে গন্ধ বা তেল পড়তে পারে, সেগুলোও নিষিদ্ধ। ফুলের তোড়া, গাছের চারা, টব খোলা অবস্থায় বহন করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য ধারালো জিনিস, যেমন ছুরি, কাঁচি, দা, বঁটি, রড, পাইপ ইত্যাদি; বড় মেশিন, যেমন ড্রিল, ওয়েল্ডিং মেশিন, গ্যাসের চুলা; এবং জ্বালানি পদার্থ, যেমন পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, স্প্রে ক্যান, বাজি, আতশবাজি বা গ্যাস সিলিন্ডারের মতো বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খোলা ব্লেন্ডার, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, কম্পিউটার বা খোলা তবলা, গিটার, হারমোনিয়াম, ক্রিকেট ব্যাট, ফুটবল, হকি স্টিক জাতীয় বাদ্যযন্ত্র ও খেলার সরঞ্জাম এবং অ্যাসিড, ব্যাটারি, পারদের মতো রাসায়নিক দ্রব্য বহন করা যাবে না। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন ও বাস্তবতা অনুযায়ী এই নিষিদ্ধ দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করার ক্ষমতা রাখে।

 

তবে কিছু জিনিস বহনে কোনো সমস্যা নেই। এর মধ্যে রয়েছে সিল করা পানির বোতল, ল্যাপটপ/মোবাইল ব্যাগ (নির্দিষ্ট আকারের মধ্যে থাকলে), প্যাকেটজাত খাবার, যেমন চিপস বা বিস্কুট, বই-খাতা এবং অফিস ফাইল। ছোট শপিং ব্যাগগুলোও আকারের নিয়ম মানলে বহন করা যাবে। কারওয়ান বাজার স্টেশনে ডিএমটিসিএলের একজন কর্মকর্তা এই কঠোর নিয়মের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, একজন যাত্রী মাছের ঝুড়ি নিয়ে উঠলে পুরো কোচে গন্ধ ছড়ায় এবং মেঝে নোংরা হয়। কাঁঠালের রস পড়লে সিট নষ্ট হতে পারে এবং ধারালো জিনিসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সবাইকে একটু সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মেট্রোরেল যেহেতু সবার জন্য, তাই একটু নিয়ম মানলেই সবাই আরামে চড়তে পারবেন। পরের বার স্টেশনে যাওয়ার আগে ব্যাগটা একবার চেক করে নিলে লাইনে দাঁড়িয়ে ফেরত আসতে হবে না।