Image description

প্রতি মাসে গড়ে নিখোঁজ ও অপহৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৫-তে পৌঁছেছে। এর মধ্যে অর্ধেকই শিশু ও কিশোরী। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে এ ঘটনা প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের ১১ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৬০ নারী ও কন্যাশিশু অপহৃত এবং নিখোঁজ হয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যও বলছে, নারী-পুরুষ মিলে চলতি বছর প্রতি মাসে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে গড়ে ৯২টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৩.৫টি। বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। অপহরণ ও নিখোঁজ হওয়া কাউকে কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করতে পারলেও অনেকেরই হদিস মেলেনি। কেউ আবার মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। অনেকের লাশ মিলেছে রাস্তাঘাটে, খাল-বিলে। এমন পরিস্থিতিতে জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বেশির ভাগ অপহরণ ঘটছে মুক্তিপণ, প্রতিশোধ, পরকীয়া, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে। নারী অপহরণ ও নিখোঁজের পেছনে পাচার, পরকীয়া, পারিবারিক কলহ, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও পরবর্তীতে হত্যা বা বিভিন্ন চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়াসহ নানা কারণ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিখোঁজ ও অপহৃত অনেক শিশু ও কিশোরীর স্থান হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের অসংখ্য হোটেল এবং আবাসিক ভবনে গড়ে ওঠা স্পা সেন্টার নামের পতিতালয়ে। তথ্যানুযায়ী, শুধু গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীতেই স্পা সেন্টারের নামে চলছে এক থেকে দেড় শ ক্ষুদ্র পতিতালয়। নানা কৌশলে অনেক শিশু, কিশোরী ও নারীকে এনে এসব স্পায় বিক্রি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তারা হারিয়ে যাচ্ছে পরিবার, সমাজ ও স্বাভাবিক জীবন থেকে। অনেককে পাচার করে দেওয়া হয় দেশের বাইরে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিখোঁজ বা অপহরণের পর সুস্থভাবে ফিরে আসার ঘটনা ঘটে না। নারীদের ক্ষেত্রে কেউ ফিরলেও পরবর্তীতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর দিয়াবাড়ী থেকে ক্যামব্রিয়ান কলেজের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত রায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ৭ নভেম্বর তাকে অপহরণ করে তার বাবার কাছে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, নারী-শিশু নিখোঁজের পেছনে অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক বিষয় দায়ী। এ ছাড়া মানব পাচারের বিষয়ও একটা বড় কারণ। নারী-শিশুর বিষয়গুলো আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি। নিয়মিত মনিটরিং করি। অনেককে উদ্ধারও করা হয়েছে।

এমএসএফ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরেই ১২ নারী ও কন্যাশিশু নিখোঁজ ও অপহৃত হয়েছেন। এর মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছেন এক নারী ও দুই কিশোরী। নিখোঁজ হয়েছে দুই শিশু, তিন কিশোরী ও চার নারী। এ ছাড়া খুন হয়েছেন ৭৩ নারী-শিশু। আগের মাসে এ সংখ্যা ছিল ৯৮ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬১ জন, যার মধ্যে শিশুই আছে ১০টি। কিশোরী ১৯ জন। দুই শিশু, তিন কিশোরী ও ছয় নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে, যার মধ্যে শিশু আছে একজন।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, নারী-পুরুষ মিলিয়ে চলতি বছরের ১১ মাসে ১ হাজার ১৪টি অপহরণ মামলা হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে ৯২টি। ২০২৪ সালে মোট ৬৪২টি অপহরণের ঘটনা ঘটে।

প্রতি মাসে গড়ে ঘটে ৫৩.৫টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃত ঘটনা আরও বেশি। কারণ অনেক ঘটনাতেই মামলা হয় না। দেখা যায় কয়েক দিন নিখোঁজ থাকার পর হঠাৎ লাশ মিলছে।