বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতেই হবে। যদি না হয় তাহলে এ দেশে বহুমুখী সমস্যা তৈরি হবে। যা এ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’
(শনিবার, ৬ ডিসেম্বর) সিলেটে ইসলামী সমমনা আট দলের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের মাঠ এখনও অনুকূলে নয়, পারস্পরিক সহিষ্ণুতা রক্ষার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে স্বার্থক করার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, এ দায়িত্ব সবার।’
তিনি বলেন, ‘কারও সংস্কৃতি নিয়ে কোনো বিরোধ নয় বরং জামায়াত সমাজের সকল সংস্কৃতিকে সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে দেখে।’
তিনি আও বলেন, ‘দেশের ভালো মন্দ নির্ভর করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। অতীতে কোন দল কী করেছে তা নিয়ে জামায়াত ভাবতে চায় না। ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায় জামায়াত।’
আগামী নির্বাচনে চাঁদাবাজ ও লুটেরাদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করে জনগণ দেশপ্রেমিক শক্তির কাছে তুলে দেবে মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ‘সমমনা ইসলামী ৮টি দল ঐক্যবদ্ধ, ইসলামপন্থীদের ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে।’
তিনি সিলেটবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা অতীতেও জালিমদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ বিরোধী আন্দোলনে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন। সিলেটবাসী কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করে না। আগামী নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনবে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘বাংলাদেশ বিপুল সম্পদে ভরপুর। তবুও ৫৪ বছরেও এ জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। বর্গিরা পালিয়ে গিয়েও সম্পদ পাচার করেছে। কিন্তু চাঁদাবাজ একদল পালিয়ে চলে গেছে, আরেক দল চাঁদাবাজির দায়িত্ব নিয়েছে, নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে। নিজেরা নিজেদের কাছে নিরাপদ নয়, তাদের কাছে দেশ কিভাবে নিরাপদ হবে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মো: রেজাউল করিম বলেন, ‘৫৪ বছর যারা আমাদেরকে জিম্মি করে রেখেছিল, আজ তারা নিজেরা নিজেদের কাছে নিরাপদ নয়। তারা নিজেরা হানাহানিতে লিপ্ত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হতবাক, আজকে সংস্কারে বাধা, নির্বাচনে বাধা, এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে। আজ তারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, যতই শয়তানি করুন, কোনো কাজ হবে না। জনগণ আপনাদের প্রত্যাখান করেছে।’
সৈয়দ রেজাউল করিম আরো বলেন, ‘আসুন গণভোটে এই চাঁদাবাজদের পরাজিত করি। হ্যাঁ-ভোট দিয়ে খুনি ও চাঁদাবাজদের গণভোটের মাধ্যমে নিপাত যাবে।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর রাষ্ট্রযন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন এদেশের ইসলামপন্থীরা। জীবন দিয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে তবুও নতিস্বীকার করেন নাই। জীবন দিয়ে বাংলার মাটি থেকে ফ্যাসিবাদ উৎখাত করেছে, নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদের উথান হতে দেবে না এদেশের জনগণ।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে বাংলাদেশ আজ দুই শিবিরে বিভক্ত। একটি দল সংস্কার ও জুলাই সনদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা জুলাই সনদের বিপক্ষে প্রচারণা চালাবে, বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখান করবে। সমমনা ইসলামী ৮ দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছে, দেশ বিরোধী শক্তির মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এদেশের জনগণ রক্ত দিয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ৮ দলকে ভোট দিতে হবে। একটি দল পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। এতদিন নির্বাচনের জন্য মুখে ফেনা তুললেও এখন নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করছে, তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছরের নজিরবিহীন হত্যা-নিপীড়নের কারিগর ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দলবলকে ভারতে পালাতে বাধ্য করেছে এদেশের জনগণ। আওয়ামী লীগের শাসন ছিল এক অন্ধকার যুগ। এই অন্ধকার যুগ আর বাংলাদেশে ফিরে না আসুক। কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে হলে, মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হলে কোরআনের দিকে ফিরে যেতে হবে। আর এজন্য ৮ দলকে বিজয়ী করতে হবে। ৮ দলই একমাত্র বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে পারবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘৫ দফা দাবিতে ৮ দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এই গণদাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ৮ দলের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘একটি দল সংস্কার নিয়ে নিয়ে কালক্ষেপণ করছে। জনগণের কাছে তাদের ক্ষমতা লিপ্সা স্পষ্ট, জনগণ আগামী নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখান করবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এদের (বিএনপি) দ্বারা দেশের কল্যাণ হয় নাই, ভবিষ্যতেও হবে না। আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই, নির্বাচন নিয়ে কোনো কালক্ষেপণ ও টালবাহানা চলবে না।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘সেকুলারপন্থী ও দেশবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করে দেশে ইসলামপন্থীদের বিজয়ী করতে হবে। ইসলামের পথে শান্তির পথে দেশকে পরিচালিত করতে হবে। এ দেশে শরিয়াহবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে হবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারতের কাছে মাথা বিক্রি করে ৫৪ বছরের পঁচা বস্তা মতবাদ নিয়ে ওরা আবার দেশ শাসন করতে চায়। বাংলাদেশের জনগণ তা চায় না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমেদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরেও দেশে চুরি, চাঁদাবাজি কমেনি। এক জালিমের বিদায় হয়েছে, নতুন জালিম ও চাঁদাবাজদের আগমন ঘটেছে।
বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব যে গণআকাঙ্ক্ষা নিয়ে হয়েছে, প্রশাসনকে সেই পালস বুঝতে হবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, ‘আজকে সিলেটের সমাবেশের মধ্য দিয়ে, ৮ দলের সমাবেশ সমাপ্ত হয়েছে। জালিমরা যদি মনে করে, ৮ দলের সমাবেশ শেষ, তাহলে ভুল করবে। ৮ দল দেশের স্বার্থে জেগে উঠবে।’
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদের সভাপতিত্বে এবং সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, সেক্রেটারি মুহাম্মদ শাহজাহান আলী ও সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের যৌথ পরিচালনা করেন।
শীর্ষনিউজ