হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের পতনের পর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। প্রথম মেয়াদের শেষভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গড়ে ওঠা প্রবল আন্দোলনের মুখোমুখি হয় দলটি। পাশাপাশি একই সময়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশের বিরোধিতার মুখোমুখি হয় তৎকালীন বিএনপি সরকার। সরকারবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন কর্মরত ও সাবেক কয়েকজন সিএসপি কর্মকর্তা। এর মধ্যে সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত হন সিএসপি কর্মকর্তা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সফিউর রহমান। তাদের নেতৃত্বে সচিবালয়কেন্দ্রিক সরকারবিরোধী একটি বলয় গড়ে ওঠে। ওই আন্দোলনে পরোক্ষভাবে তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এইচটি ইমাম, এএসএইচকে সাদেক, শাহ এএমএস কিবরিয়া, আবুল মাল আবদুল মুহিত, আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ আরো কয়েকজন সাবেক সিএসপি কর্মকর্তা। তারা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
পাকিস্তান সরকারের মাঠ পর্যায়ের এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে আমলা হিসেবে নিয়োজিতদের বলা হয়, সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) কর্মকর্তা। স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানসহ সব প্রদেশেই মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন পরিচালনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে এ কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করতে হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সখ্য থাকলেও তাদের ওপর রাজনীতিবিদদের প্রভাব ছিল সামান্য। বরং প্রশাসন পরিচালনায় রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ছিল বহুল আলোচিত বিষয়। স্বাধীনতার পরও তারা সিএসপি কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে কর্মরত বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলোর অনুপস্থিতি বিএনপিকে শক্তিশালী সরকার গঠনে ব্যর্থ করে তোলে। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে টানা আন্দোলনের চাপের মুখে সচিবালয়কেন্দ্রিক আমলা ও কর্মচারীদের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়। যাদের বড় অংশই ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী। এ অংশকে পেছন থেকে প্রভাবিত করেন আওয়ামীপন্থী সাবেক সিএসপি কর্মকর্তাদের প্রভাবশালী একটি অংশ। শেষ পর্যন্ত তীব্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংকটের মুখে ৩ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক বিল আনার ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙে গেলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯৯৫ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রথম মেয়াদের শেষ প্রান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়। পরবর্তী নির্বাচন দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরিচালনার দাবিতে কঠোর আন্দোলন গড়ে ওঠে। বিরোধী দলে তখন আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি। সরকার ও সরকারি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ছিল বিপরীতমুখী অবস্থানে। সরকার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে। এর ফলে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। দুই পক্ষের এ রাজনৈতিক বিরোধের মাঝে আমলাদের একটি অংশ আমলাতন্ত্রের স্বাভাবিক শিষ্টাচার ও মূল্যবোধ ত্যাগ করে প্রথমে গোপনে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ স্থাপন করেন।
ওই সময়টায় ডিজিএফআইয়ের ডিজির দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান চৌধুরী বীর বিক্রম। তার ভাষ্যমতে, ‘ছিয়ানব্বইয়ের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর কিছু আমলা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে অসহযোগিতা করেছিল। প্রধানত মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে জনতার মঞ্চ গঠন হয়। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। যার ফলে সেই সরকার অল্পদিনের মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য হয়।’
মূলত আমলাতন্ত্রের প্রশাসন সার্ভিসের দুটি বড় অনিয়মিত ব্যাচের কতিপয় কর্মকর্তা এ উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। এ দুটি ব্যাচ হলো ১৯৭৩ ব্যাচ ও ১৯৮৩ ব্যাচ। প্রথমটি মুক্তিযোদ্ধা ব্যাচ নামে পরিচিত। তাদের নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সিএসপি সচিব ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তারা ভেতরে ভেতরে আমলাতন্ত্রে একটি সরকারবিরোধী ও আওয়ামী লীগপন্থী রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলেন। শক্তি বৃদ্ধি করতে এক সময় তারা সচিবালয়ের কর্মচারী সমিতিকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন।
সে সময় সচিবালয় কর্মচারী সমিতি তাদের নিজস্ব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছিল। সরকার পরিবর্তনের পর তাদের সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে গোপন বৈঠকের ব্যবস্থা করেন আওয়ামীপন্থী আমলারা। কর্মচারীদের নেতৃত্ব দেন কর্মচারী নেতা সৈয়দ মহিউদ্দিন। আমলা-কর্মচারীদের এ রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পরিচালিত মূলত ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে। সিএসপি হওয়ার সুবাদে তিনি আমলাতন্ত্রের প্রভাবশালী গোষ্ঠী সিএসপি ক্লাবের অনেকের আনুকূল্য পেতেন। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে আমলা বিদ্রোহ সংঘটিত হলো। যার ফলে সরকারের নির্দেশ কোথাও কার্যকর হতো না। এ বিষয়টি তখনই আমি বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই। বিষয়টি জানানোর পর খালেদা জিয়া আমাকে বলেছিলেন, সেনাবাহিনী থেকে আমাকে বলেছে যে এবার তো আমরা আপনার বিরুদ্ধে কিছু করিনি। আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে আমলারা।’
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে আমলাদের সরকারবিরোধী এ প্লাটফর্ম এক সময় প্রকাশ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা সচিবালয়ের অভ্যন্তরে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করা শুরু করে। তাদের অনেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেন। অধিকাংশ কর্মকর্তা এ ধরনের রাজনৈতিক আচরণের ও উচ্ছৃঙ্খলতার বিরোধী হলেও সম্মান রক্ষার্থে তাদের মুখোমুখি হতে চাননি। তারা চেয়েছেন সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করুক। যদিও সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল।
এ অবস্থায় ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সচিবালয় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নজিরবিহীনভাবে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে কর্মচারী-কর্মকর্তার যৌথ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মচারী নেতা সৈয়দ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সচিব ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সিনিয়র সহকারী সচিব র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আবু আলম শহীদ খান প্রমুখ সরকারবিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন। বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে প্রশাসন সার্ভিসের সদস্যরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন না।’ মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ সচিবদের একটি গ্রুপ বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে একই কথা জানায়।
এ অবস্থায় ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন হয় অনেকটা একতরফা নির্বাচন। আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচন-পরবর্তী সচিবালয় আরো উত্তপ্ত হয়। ৯ মার্চ সচিবালয়ে নজিরবিহীনভাবে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী আহত হন। কর্মস্থলে আসার পথে কর্মকর্তাদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটে। সচিবালয়কে কেন্দ্র করে কর্মচারী সংহতি পরিষদ গঠন করা হয়। এ সংগঠন সরকার পতনের জন্য আন্দোলনকারী দলগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে কর্মসূচি দিতে থাকে। নানা অঘটন ঘটতে থাকে। এ অবস্থায় ২৩ মার্চ সচিবালয়ের পাশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগ একটি মঞ্চ স্থাপন করে। এর নাম দেয়া হয় ‘জনতার মঞ্চ’। এ মঞ্চ থেকে তাদের সরকারবিরোধী কর্মসূচি পরিচালিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে তার অনুগত কর্মকর্তারা এবং সৈয়দ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে কর্মচারীদের একটি অংশ সচিবালয় থেকে মিছিল নিয়ে এসে এ মঞ্চে আরোহণ করেন এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এ মঞ্চে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন সচিব ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সিনিয়র সহকারী সচিব আবু আলম শহীদ খান, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, উপসচিব আবদুল হাই, খান বেলায়েত হোসেন, কর্মচারী নেতা সৈয়দ মহিউদ্দিন, শাহ আলমসহ আরো কয়েকজন। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জনতার মঞ্চে অংশ নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছিলেন সাবেক সিএসপি কর্মকর্তা এইচটি ইমাম। তিনি সিএসপিতে যোগ দেন ১৯৬২ সালে। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫-এর ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। এর পরও সচিব হিসেবে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সে সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেসব সাবেক কর্মকর্তা প্রভাবিত করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এএসএইচকে সাদেক। দীর্ঘ সরকারি জীবনে তিনি শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং নিপার পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৭৪-৭৮ সালে কুয়ালালামপুর ও ১৯৮৫-৯০ সালে ব্যাংককে ইউনিডোর প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ ও আঞ্চলিক শিল্প উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। অবসরের পর ১৯৯২ সালে সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একই বছরের ২৩ জুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে সিএসপি ক্যাডারে যোগ দিয়ে নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জে মহকুমা প্রশাসক এবং পরে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরকারি কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধকরণে যুক্ত ছিলেন শাহ এএমএস কিবরিয়া। তিনি ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের বৈদেশিক বিভাগে যোগদান করেন এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিকবিষয়ক বিভাগের মহাপরিচালক হয়েছিলেন। এছাড়া অর্থমন্ত্রী হিসেবে কিবরিয়া ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে এমপি বা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমলাদের সংগঠিত করা সিএসপি কর্মকর্তা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন ও প্রতিমন্ত্রী হন। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হন ও পরবর্তী সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ বিশেষ ব্যাচের সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৯৬ সালে ছিলেন সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হন। ২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে পরে এমপি হন।
এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের ওই সময় বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সাবেক সিএসপি আবুল হাসান মাহমুদ আলী, যিনি সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া আমলাদের সরকারবিরোধী অবস্থানে আনতে ১৯৯৬ সালে ভূমিকা পালন করেছিলেন সাবেক সিএসপি আবুল মাল আবদুল মুহিতও। পরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দীর্ঘ সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। খালেদা জিয়ার সরকার পতনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছিলেন সাবেক সিএসপি মোহাম্মদ মোস্তফা ফারুকসহ আরো অনেকেই।
১৯৯১ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ১৯৯৬ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত এসএসএফের ডিজির দায়িত্ব পালন করেন মেজর জেনারেল (অব.) জামিল উদ্দীন আহসান বীর প্রতীক। তার ভাষ্যমতে, ‘ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো আমলাদের অর্গানাইজ করে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহার করা হয়। সে সময় একজন সিনিয়র আমলার নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে যার একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ ছিল। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় এ ধরনের আমলাকেন্দ্রিক হস্তক্ষেপের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমলাদের অসহযোগিতাই তৎকালীন সরকারের পদত্যাগের প্রধান কারণ হিসেবে ছিল না। মূলত এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক বিলটি পাসের জন্য। সেজন্য সেই নির্বাচনে বিএনপি এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিয়েছিল যারা অন্য কোনো স্বাভাবিক সময় হলে মনোনয়ন পেত বলে আমার মনে হয় না।’
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের অধিকাংশ বিরোধী দলের বর্জনের কারণে মাত্র ২১ শতাংশ ভোটে সম্পন্ন হয়। বর্জিত এ নির্বাচনে বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ফ্রিডম পার্টি একটি, স্বতন্ত্ররা ১০টি আসন পায়। ১০টি আসনের ফলাফল অসমাপ্ত থাকে এবং একটিতে নির্বাচন স্থগিত হয়। নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি একেএম সাদেক। এ সংসদের প্রথম সভা বসে ১৯ মার্চ এবং মাত্র ১২ দিন পর ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সালে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। প্রধান বিরোধী দলের নেতা ছিলেন লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ এবং চিফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ১৯৯৩ সালে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পেশ করে, কিন্তু বিএনপি সরকার তা নাকচ করে। আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতা ব্যর্থ হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও বর্জনের মধ্যেই ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন হয়। পরে দেশব্যাপী অসহযোগ কর্মসূচি এবং তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী ৩ মার্চ তত্ত্বাবধায়ক বিল আনার ঘোষণা দেন। ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙে দেয়া হলে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জুন ১৯৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আর নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, প্রশাসন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করেছে।