অসুস্থ হলে নিজেদের কলোনিকে (পিঁপড়ার দল বা সমাজ) রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পিঁপড়া শাব (যাদের বলা হয় পিউপি) এক ধরনের বিশেষ গন্ধ ছড়ায়। এই গন্ধের অর্থ হলো ‘আমাকে মেরে ফেলো।’
অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে। গবেষকেরা বলছেন, এটি এক ধরনের আত্মত্যাগের আচরণ, যা পুরো কলোনিকে বিপদ থেকে রক্ষা করে।
একটি পিঁপড়ার বাসায় হাজার হাজার পিঁপড়া কাছাকাছি অবস্থান করে। তাই সেখানে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বড় ও প্রাপ্তবয়স্ক কর্মী পিঁপড়ারা অসুস্থ হলে বাসা ছেড়ে বাইরে গিয়ে মারা যেতে পারে। কিন্তু কচি পিউপিরা কোকুনের ভেতর আটকে থাকে, নিজেরাই আলাদা হতে পারে না।
আগের গবেষণায় দেখা যায়, মারাত্মকভাবে অসুস্থ পিউপির শরীরে রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং তারা তীব্র গন্ধ ছড়ায়। কর্মী পিঁপড়ারা এই গন্ধ বুঝে কোকুন ছিঁড়ে (খোলস) পিউপিকে মেরে ফেলে। তারা যে বিষ ব্যবহার করে, তা সংক্রমণও ধ্বংস করে। ফলে কলোনিতে রোগ ছড়ায় না।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সেই গন্ধ সংগ্রহ করে সুস্থ পিউপির শরীরে লাগান। দেখা যায়, কর্মী পিঁপড়ারাও তাদের ধ্বংস করে ফেলে। এতে প্রমাণ হয়—এই গন্ধই পিউপিদের ‘ধ্বংস করো’ সংকেত।
আরও দেখা গেছে, পিউপি শুধু তখনই এই সংকেত দেয় যখন আশপাশে কর্মী পিঁপড়া থাকে। অর্থাৎ এটি ইচ্ছাকৃত সতর্কবার্তা, যা কলোনিকে রক্ষা করার এক আত্মত্যাগী আচরণ।
তবে রানির (queen) পিউপিদের ক্ষেত্রে আচরণ একটু ভিন্ন। তারা অসুস্থ হলেও এ ধরনের গন্ধ দেয় না। কারণ রানির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী। তারা সাধারণত নিজেরাই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এখন খুঁজে দেখছেন—রানি পিউপি কি কোনো পরিস্থিতিতে এই সংকেত দেয় কি না। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে।