বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তার চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। এতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে হাসপাতালের গেট ব্যতীত অন্য কোথাও তেমন নিরাপত্তার বলয় চোখে পড়ে না।
হাসপাতালের সামনে কেউ এসেছে ভালোবাসার টানে, কেউ আসছেন ছবি-ভিডিও করতে। আবার কেউ কেউ ভিউ কামানোর জন্য মোবাইল ফোন দিয়েই শুরু করেন লাইভ ভিডিও।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
হাসপাতালটিতে রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাসপাতালের গেটে পুলিশ, এপিবিএন, বিজিবি সদস্য দেখা যায়। হাসপাতালটির গেটের মধ্যেও রয়েছে বিপুল পরিমান পুলিশ সদস্য। বিশেষ নিরাপত্তায় হাসপাতালের ভিতরে ও খালেদা জিয়ার ওয়ার্ড কেন্দ্রীক রয়েছে এসএসএফ সদস্য। এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে সামনে সাংবাদিক, পুলিশ ও উৎসুক জনতার সহস্রাধিক মানুষের ভিড় রয়েছে। সাংবাদিক ও পুলিশ তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলেও উৎসুক জনতা শুধু ছবি-ভিডিও নিয়েই ব্যস্ত। কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে এসেছেন। কেউ কেউ কথা বলছেন মোবাইল-ইউটিইউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের সঙ্গে। আবার কেউ বলছে তাকে ভালোবাসি তাই স্মৃতি হয়ে থাকতে এখানে এসেছি। তবে মোবাইল ও ইউটিউবারদের জন্য মাইন স্ট্রিম সাংবাদিকদের বিভ্রান্তিতে পড়তে দেখা গেছে।
উৎসুক জনতার মধ্যে অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। এক এক করে ১০-১২টি মোবাইল ও ইউটিউবারদের সামনে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম থেকে আসা হাসিনা বেগম। তিনি চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার সহসভা নেত্রী ও ২২নং ওয়ার্ড এনায়েত বাজারের সভা নেত্রী। তার কাছে হাসপাতালের সামনে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ম্যাডামকে দেখতে এসেছি, তার ভালোবাসার টানে এসেছি। তার জন্য নামজ পড়ে দোয়া করেছি। এখানে ঘুরে ঘুরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আমি কথা বলি। এখানে খারাপ কিছু দেখছি না। সারা রাত বাসে জার্নি করে আজ সকালে ঢাকা এসে হাসপাতালে এসেছি ম্যডামের জন্য দোয়া করতে।
বরগুনা বামনা বড়তালেশর ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি ফরিদ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের নেত্রী যেদিন থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ওইদিন থেকে এখানে আসছি। প্রতিদিন সকালে ও রাতে এখানে আসি। বিএনপিকে ভালোবাসি ও ম্যাডামকে ভালোবাসি তাই এখানে এসে বসে থাকি। অনেক মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলি। নেত্রীর জন্য দোয়া করি।
দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান ফটকের আশেপাশে হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন, ফেসবুকে লাইভ দিয়েছেন ও সেলফি করছেন। হাসপাতালে রোগী পরিবহন ও জরুরি সেবা যেন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সরাসরি সাইনবোর্ড বা হাসপাতালের ফটককে ব্যাকগ্রাউন্ড ধরে সেলফি ও ভিডিও করা, টিকটক ক্লিপ তৈরি করা এবং ফটোশুটের কারণে হাসপাতালের সামনের মূল সড়ক বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সদস্যরা সারাক্ষণ টহল দিচ্ছেন এবং ভিড় সরানোর জন্য বারবার অনুরোধ করছেন। দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য দেশ রূপান্তরকে জানান, মানুষের ভিড় হলে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ–বাহিরে সমস্যা হয়। আমরা অনুরোধ করছি ভিড় না করতে।
বাড্ডা এলাকার সাইদুর রহমান বলেন, ফেসবুকে নানারকম খবর ছড়িয়ে পড়ায় বাসায় আর থাকতে পারছিলাম না, তাই হাসপাতালের সামনে একটু দেখতে এলাম। যদিও ভিড় করা ঠিক না, তবুও কেমন জানি টান লাগে।
বসুন্ধরার মধ্যে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মী আরিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে সবাই ভিউ কামানোর জন্য আসতেছে। এখানে অসুস্থতার জন্য দোয়া করার চেয়ে সবাই উৎসব পালন করছে। সকাল ৭টা থেকে শুরু করে রাত ২-৩টা পর্যন্ত ভিড় করে। হাসপাতালের সামনের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভিড় ও ক্যামেরার ফ্ল্যাশ রোগীসেবা বা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এ কারণে হাসপাতাল এলাকায় ব্যারিকেড বসানো হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানে ভিড় না করে তার জন্য (খালেদা জিয়া) সবাই দোয়া করবেন।