‘সদরপুরে মন্দিরের জমি নিয়ে সংঘর্ষ-পালিয়ে যাচ্ছে হিন্দু পরিবার, টহলে পুলিশ’ -শিরোনামে সম্প্রতি ‘হিন্দুস নিউজ’ (hindus news) নামে একটি পোর্টালে জমিসংক্রান্ত বিরোধের সংবাদকে বিকৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে জনমনে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
রোববার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ওই পোর্টালে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
প্রতিবেদনের শিরোনামটির স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে উদ্বেগ বাড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, হামলার পর ভয়-আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক হিন্দু পরিবার।
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে হিন্দুজ নিউজ (hindus news) পোর্টালের সংবাদের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে পোর্টালটি।
ঢেউখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বয়াতি বলেন, গত ১৬ নভেম্বর জমি বেচাকেনা নিয়ে দুই পক্ষ তর্কাতর্কি হয় কিন্তু বড় কোনো সংঘর্ষ হয়নি এমনকি কোনো হিন্দু পরিবার পালিয়েও যায়নি। আর জমি বেচাকেনা সম্পূর্ণই বৈধ উপায়ে হয়েছে। মন্দির কোনো ঝামেলা নেই।
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়—ওই পোর্টালের প্রতিবেদনটি অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তিকর। বিরোধটি কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক নয়; কারণ উভয় পক্ষেই সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে। ‘হিন্দুস নিউজ’ প্রতিবেদনে যেভাবে একক ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর হামলা দেখানো হয়েছে, তা ঘটনা অনুযায়ী সঠিক নয়। হিন্দু পরিবার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর অনেকেই জানায়, জমির মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধ থেকেই ১৬ নভেম্বর ভোরে কিছু উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে তারা বলছেন—এটি ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নয়।
রোববার (২৩ নভেম্বর ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফরিদপুর জেলা পুলিশের দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়— ‘সদরপুরে মন্দিরের জমি নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের দেওয়ানি মামলা চলমান। উভয় পক্ষেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে। সম্প্রতি দু’পক্ষের কথা কাটাকাটির জেরে ছোট একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এটিকে ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’ বা ‘হিন্দু পরিবার পালিয়ে যাচ্ছে’ এ ধরনের দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
স্থানীয় পূজারী বিমল ভট্টাচার্য বলেন, আমরা বহু বছর ধরে এখানে হিন্দু–মুসলমান একসঙ্গে আছি। ঝগড়া হয়েছে জমি নিয়ে, ধর্ম নিয়ে নয়। আর পালিয়ে যাওয়ার বিষয় পুরোটাই গুজব।
সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় জানান, হরিন্যা মৌজার জমিসংক্রান্ত বিরোধটি সম্পূর্ণই দু’পক্ষের মালিকানাসংক্রান্ত। এটি কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। উভয় পক্ষেই মুসলিম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুই সম্প্রদায়ের মানুষ জড়িত আছেন। জমি দখলকে কেন্দ্র করে ১৬ নভেম্বর ভোরে সীমিত আকারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ বা গণ পলায়নের ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা জানান, জমির মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক মাস ধরে তর্কবিতর্ক চলছিল। উভয় পক্ষেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে। গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
আমরা এলাকাবাসীকে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।