Image description

মানুষের ভয় ও আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। আবার কখন যে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাদের বাড়ি-ঘর, কখন যে মাথার উপরের ছাদটি ধসে পড়ে সেই অজানা ভয়ে সময় কাটছে মানুষের।

 

২২ নভেম্বর শনিবার( ৪.৩)

সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ড

উৎপত্তিস্থল : নরসিংদীর পাঁচদোনা

 

২২ নভেম্বর শনিবার (৩.৭)

সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড

উৎপত্তিস্থল : ঢাকার বাড্ডা এলাকা

 

২২ নভেম্বর শনিবার (৩.৩)

সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট

উৎপত্তিস্থল : নরসিংদীর পলাশ

 

২১ নভেম্বর শুক্রবার (৫.৭)

সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট

উৎপত্তিস্থল : ঢাকা থেকে প্রায় ১৩ কি.মি পূর্বে নরসিংদীর মাধবদী

এক দিনের ব্যবধানে আবারো তিন দফা ভূমিকম্প হয়ে গেল। মানুষের ভয় ও আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। আবার কখন যে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাদের বাড়ি-ঘর, কখন যে মাথার উপরের ছাদটি ধসে পড়ে সেই অজানা ভয়ে সময় কাটছে মানুষের। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে প্রথমে একটি মৃদু মাত্রার ভূমিকম্প হয়। আলোচিত নরসিংদীর পলাশ উপজেলা রিখটার স্কেলে ৩.৩ মাত্রার এ ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল। এর পর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে ৩.৭ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, যার কেন্দ্রস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা। এর এক সেকেন্ড পরই ৬টা ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ডে আবারো ৪.৩ মাত্রার ভূকম্পন ঘটে যেটার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পাঁচদোনা ও শিবপুুরের মাঝামাঝি এলাকা। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবায়েত কবির ও ফারজানা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে দুই দিনে চারবার কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা।

গত সন্ধ্যার ভূমিকম্প আগের দিনের মতো বেশ শক্তিশালী ছিল বলে জানা গেছে। রিখটার স্কেলে সন্ধ্যার ভূমিকম্পটি মাঝারি মাত্রার হলেও ঢাকাবাসীর কাছে শক্তিশালী মনে হয়েছে। কারণ এর কেন্দ্র ছিল গুলশানের পাশেই বাড্ডা এলাকা। সে কারণেই অনেক বেশি আতঙ্ক ভর করেছে মানুষের মধ্যে।

ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ যেটার ব্যাপারে পূর্বাভাস দেয়া যায় না। আবার ভূমিকম্পের কারণে কখন যে মাথার ওপরে ভারী কোনো বস্তু ভেঙে পড়ে সেটাও কেউ বলতে পারে না। তাই সব বয়সী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে রাজধানীসহ তিন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু ও কয়েক শতাধিক আহতের খবরে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আরো বেশি ভয় কাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সন্ধ্যায় ভূমিকম্পের সময় রাজধানীতে অনেকেই ঘরবাড়ি ও অফিস থেকে দ্রুত বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ঝাঁকুনি অনুভূত হওয়ায় মানুষজন ভয়ে খোলা জায়গায় অবস্থান নেয়। তবে এ কম্পনে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

আগের দিন শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্বে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে নরসিংদী, ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপক আতঙ্ক ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই ধারাবাহিক কম্পনগুলো আফটারশক (পরাঘাত) বা ভূকম্পনজনিত ‘ ফোরশক’-এর অংশ হতে পারে। তারা নাগরিকদের অপ্রয়োজনে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এ দিকে ভূমিকম্পের পর ভবনগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর জানিয়েছে, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে উদ্ধারকারী দল।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ঢাকার অনেক স্থাপনা নরম মাটিতে গড়ে উঠেছে বলে এখানে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মোটেও কম হবে না। নরম মাটিতে গড়ে ওঠা স্থাপনায় ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি বেশি হয়ে থাকে। খরচ কমানোর জন্য অনেক স্থাপনায় রড কম দেয়া হয়, আবার যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি বেশিক্ষণ সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করবে সে কাজটিই করা হয়ে ওঠে না। ফলে দেখতে অনেক সুন্দর ভবন হলেও সেটাও ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি নাও সহ্য করতে পারে। আর নরম মাটিতে অনেক স্থাপনা হওয়ায় বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেখানে ক্ষয়ক্ষতিটাও বেশি হতে পারে।

অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বড় ভূমিকম্প হলে ঢাকার অনেক ভবন টিকে থাকবে না। তিনি বলেন, ঢাকায় মোট ২১ লাখ বাসা আছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ বাসা এক অথবা দুইতলা। ৪ তলার ওপরে আছে প্রায় ৬ লাখ। এই বাসাগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কি না তা চেক করে রাজউকের উচিত নতুন করে সার্টিফিকেট দেয়া। এ জন্য রাজউকের কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। ভবন মালিকদেরই আহ্বান করতে হবে তারা যেন তাদের ভবনগুলো চেক করে ভূমিকম্প সহনীয় সার্টিফিকেট নেয়। ড. মেহেদী বলেন, সর্বাগ্রে বাংলাদেশে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলতে হবে। বিএনবিসি কার্যকর হওয়ার পর যেসব ভবন তৈরি হয়েছে সেগুলো চেক করে চিহ্নিত করতে হবে, ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্যই এটা প্রয়োজন।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হামিদুর রহমান জানান, ইঞ্জিনিয়াররা যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভবনের স্ট্রাকচারের ডিজাইন করলেও ভবন মালিক খরচ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় রড-সিমেন্ট না দিয়েই ভবন করে ফেলেন। সে দায় শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারদেরই বহন করতে হয়, এটা দুঃখজনক। ঢাকায় ভবন নির্মাণের পর রাজউক থেকে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে হয়। রাজউক অনেক সময় সেটা যথাযথভাবে করে না অথবা করতে সমর্থ হয় না। এখানে রাজউকেরও দায় আছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ড সময়ে যে ভূমিকম্পটি হয়েছে ৩.৩ মাত্রার। সেটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায়। এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে যে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে সেটিরও উৎপত্তিস্থল ছিল সেই একই জেলায়। নরসিংদী এলাকায় এর আগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এর আগে কখনো নরসংিদীর কোনো ভূমিকম্পে মানুষের মৃত্যু হয়নি অথবা শ’খানেক মানুষ আহত হয়নি।

মার্কিন ভূমিকম্প জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, ১৯৫০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৫.৫ অথবা এর চেয়ে বেশি মাত্রার ১৪টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুইটি ভূমিকম্প ৬ মাত্রার ছিল। ওই ১৪টি ভূমিকম্পের সবটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর উৎপত্তিস্থলের ২৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল।

মূলত টেকটোনিক প্লেটের নাড়াচড়ার কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। টেকটোনিক প্লেট হলো ভূঅভ্যন্তরের কঠিন শিলাস্তর। বাংলাদেশ দুইটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝখানে অবস্থিত। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের কাছেই ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট বার্মিজ টেকটোনিক প্লেটের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। একটি প্লেটের সাথে আরেকটি প্লেটের ধাক্কা বা সংঘর্ষ লাগলেই তখন ভূমিকম্প হয়। তবে এটা বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হতে পারে। সাধারণত একটি ভূমিকম্প হলে ভূঅভ্যন্তরের যে প্রেশার বা চাপ থাকে সেটা কমিয়ে দেয়। তবে গতকাল শনিবার ও এর আগের দিন শুক্রবার পরপর যে তিনটি ভূমিকম্প হয়ে গেলো তাতে ভূঅভ্যন্তরের চাপ কমেছে কিংবা এটা ভূমিকম্পগুলো আরো বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। এটা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেয়ার মতো উন্নত প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কার হয়নি। ফলে মানুষ যত বেশি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সচেতন হবে এবং ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে নিজেদেরই মঙ্গল। সরকার নিয়ম করতে পারবে কিংবা সেই নিয়ম অনুসারে ভূমিকম্পের সহনীয় করে ভবন তৈরি করার দায়িত্ব ব্যক্তির। এটাই করতে পারলে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প হলেও ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে প্রকৌশলীরা বলছেন।

ঘোড়াশালের উৎপত্তিস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ : শুক্রবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশালের বিভিন্ন এলাকার মাটিতে ফাটল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। গতকাল ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম ও পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ধসে পড়া মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ভূতত্ত্ব বিভাগের সাত সদস্যের একটি দল এসব এলাকা পরিদর্শন ও নমুনা মাটি সংগ্রহ করেন বলে জানিয়েছেন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ স ম ওবায়দুল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ফাটল ধরা মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। এসব নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কী ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে বা কতটুকু গভীরতায় হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এ দিকে ভূমিকম্পে নরসিংদীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট। কমিটি গঠন করেছে পৌর প্রশাসন। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু তাহের মো: শামসুজ্জামান।

নরসিংদী আরো দু’বার ভূকম্পনের কেন্দ্রস্থল

নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে গতকাল সকালে ভূকম্পন হওয়ার ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পুনরায় সন্ধ্যায় নরসিংদী ও এর আশপাশের এলাকায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে নরসিংদীতে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পুনরায় সন্ধ্যা ৬ টা ৬ মিনিটে ভূমিকম্প হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সোয়া ৭টা) ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত খবর পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রে প্রফেশনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের ওয়েবসাইটে সকালের মৃদু মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার ২৬ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর পলাশে। এ ভূমিকম্পে নতুন করে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

এ দিকে গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলায় কমবেশি দেড় শতাধিক কাঁচা, আধাপাকা ও বহুতল ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সচেয়ে বেশি ভবনে ফাটল ধরে পলাশ উপজেলায়। পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবুবক্কর সিদ্দিকী জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ৩০টি ভবনের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিস্তারিত জানার জন্য কন্ট্রোল চালু করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, ভূমিকম্পে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। তবে আহতদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। জেলায় প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। তবে গুরুতর আহতের সংখ্যা কম। ভূমিকম্পের জন্য বন্ধ থাকা ঘোড়াশাল সারকারখানা এবং ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনো চালু করা হয়নি।

এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামার সময় অন্তত শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে। এই ঘটনায় পিতা-পুত্রসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যেই সবার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অন্তত শতাধিক ভবন ও বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে ভূমিকম্পের ফলে। সকল উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসব ক্ষতি নিরূপণে কাজ করে যাচ্ছে।

ভবন-সড়কে ফাটল : শুক্রবার আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। এক দিন পার হলেও আতঙ্ক কাটেনি সাধারণ মানুষের মধ্যে। ফাটল ধরেছে ভবন, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে; হেলে পড়েছে কয়েকটি বহুতল ভবন। কোথাও কোথাও মাটি ধসে গেছে, পানিতে অস্বাভাবিক ঢেউ দেখা গেছে নদীতে।

পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে রাস্তার বুক চিরে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। কলেজটির পাশের দোকানদার ফজলু মিয়া বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় বিকট শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। হঠাৎ দেখি গেটের ভেতরের মাটি সরে ফাটল তৈরি হয়েছে। জীবনে এমন দৃশ্য দেখিনি।’ ঘোড়াশালের বিভিন্ন এলাকায় মাটিতে ফাটল এবং ফাঁকা গহ্বরের সৃষ্টি হয়েছে।