ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বাউল সম্রাট আবুল সরকারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এই দাবি তোলেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ইসলামের অবমাননার অজুহাতে তার নামে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার ও জেলে নেওয়া হলো কেন? ইসলাম কি এত ঠুনকো বিষয় যে সামান্য কথাতেই অবমাননা সম্ভব?’ তিনি আরও বলেন, সৃষ্টিকর্তা নিজেই বলেছেন, তিনি তাঁর ধর্মের হেফাজত করবেন; তাই কোনো মত প্রকাশকে কেন্দ্র করে কাউকে দমন বা শাস্তি দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।
অধ্যাপক মামুন দাবি করেন, বাউল আবুল সরকার কখনো ঘুষ, দুর্নীতি বা অনাচারের বিরুদ্ধে বলতে ভয় পাননি। বরং ধর্মীয় অনুশাসন মানার পাশাপাশি নৈতিকতার প্রতি সজাগ থাকতে মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সেই বক্তব্য নিয়েই আজ প্রশ্ন ওঠানো হচ্ছে বলে তার মন্তব্য।
স্ট্যাটাসে অধ্যাপক মামুন সমাজে ভিন্নমত, প্রশ্ন ও মুক্তচিন্তার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্যে, ধর্মের নামে যারা ওয়াজ করেন, তাদের অনেককে ঘুষ–দুর্নীতি বা অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায় না; অথচ বাউলদের প্রশ্ন তোলা নিয়ে আজ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
সরকারপ্রধানের উদারতা নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘একটি সরকার প্রধানকে ঠিক তাপাধারের মতো হতে হয়। যাকে যতই গালি দিই রাগ করবে না, আবার যতই ভালোবাসি না কেন, বিগলিতও হবে না।’ সৃষ্টিকর্তাকেও তিনি পরম ক্ষমাশীল উল্লেখ করেন।
বাংলার ফোক, বাউল ও কবিয়াল সংস্কৃতির গুরুত্ব তুলে ধরে ড. মামুন বলেন, এ ধারার গানের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এ ভূমির গভীর সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও জীবনদর্শন। তিনি জানান, বিদেশিরাও ‘কোক বাংলা’র গান বিশেষভাবে উপভোগ করেন—যা প্রমাণ করে, বাংলার ফোকধারা বৈশ্বিকভাবেও সমাদৃত।
স্ট্যাটাসের শেষ অংশে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘দিন দিন আমরা কেন এত অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি? কেন মাজার ভাঙতে হবে, বাউল আখড়া ভাঙতে হবে, গান নিষিদ্ধ করতে হবে? কেন আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে? আমরা তো ভেবেছিলাম আমরা মুক্ত হব, স্বাধীন হব।’
অধ্যাপক মামুনের এই স্ট্যাটাস প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।