তিন প্রার্থীর মধ্যে ২ জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন, আর একজন বাম সমর্থিত ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ থেকে নির্বাচন করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ জন হলেন— অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চন্দন কুমার দাস ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিঠুন চন্দ্র রায়। তারা দুজনই সনাতনী শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় স্থাপন, সবার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের সমান সুযোগ নিশ্চিত করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মানোন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অপরদিকে ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেলের প্রার্থী সংগীত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী গৌরব ভৌমিক সবার নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা ও ধর্ম পালনের সুযোগ নিশ্চিতে কাজ করার কথা জানান।
জকসু চুড়ান্ত ভোটার তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, মোট ১৬ হাজার ৩৬৫ জন ভোটারের মধ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটার প্রায় ২ হাজার। এই সনাতনী ভোটাররা নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারণে ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করবে বলে ধারণা করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে প্রার্থী হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বুলিং এর শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন চন্দন কুমার দাস। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ তোলেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, মনোনয়ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে একটি গোষ্ঠী আমাকে সংখ্যালঘু হিসেবে ট্রিট করছে, আর তাদের একটাই উদ্দেশ্য আমাকে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ট্যাগ দেওয়া। আপনাদের এ ধরনের মানসিকতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি।
জয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চন্দন কুমার দাস বলেন, সৃষ্টিকর্তা সহায় আমি শতভাগ আশাবাদী শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে আমার পাশে থাকবেন। ২০ বছর যাবৎ ক্যাম্পাসে সনাতনী শিক্ষার্থীদের প্রার্থনার কোনো নিদির্ষ্ট স্থান নাই। আমি ভিপি নির্বাচিত হতে পারলে ক্যাম্পাসে সবার আগে মন্দির করে দেবো। শুধু সনাতনীদের জন্য নয়, অন্য ধর্মের অনুসারীদের জন্যও উপাসনালয়ের ব্যবস্থা করে দিবো। নির্বাচিত হলে, আবাসন ও পরিবহণ সংকট নিরসন, হলের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ক্লাসরুম ও গবেষণাগার আধুনিকায়ন, সেশনজট নিরসন, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করবো। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরির চেষ্টা করব।
অপর স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিঠুন চন্দ্র রায় বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সনাতনী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব। সনাতনী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, উপাসনালয়ের ব্যবস্থা এবং শারদীয় দুর্গাপূজা ও অন্যান্য ছুটির বিষয়গুলো জোর দিয়ে দেখব।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে আন্দোলন, সভা, এবং অন্যান্য কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিচালনা করব। সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ তৈরি, গবেষণা খাত, পরিবহন সহ শিক্ষার্থীদের সার্বিক সমস্যা সামাধানের চেষ্টা করব।
বাম রাজনীতিতে মানবিক রাজনীতি আখ্যায়িত করে ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেলর ভিপি প্রার্থী গৌরব ভৌমিক বলেন, বাম রাজনীতি মানে আমার কাছে মানবিক রাজনীতি যেখানে ভেদাভেদ নয়, ন্যায় ও সমতা জায়গা পায়। এই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সাশ্রয়ী খাবার, বরাদ্দকৃত অর্থের সমবণ্টন, গবেষণা খাতে যথেষ্ট অর্থের বরাদ্দ, যার যার সংস্কৃতি এবং ধর্ম পালনের জায়গা সেইসাথে আমাদের শিক্ষার্থীদের আবসন ভাতা নিশ্চিত করা এগুলোই আমার মূল প্রতিশ্রুতি। এছাড়া সনাতনী শিক্ষার্থীদের জন্য মন্দিরের ব্যবস্থা করব।
উল্লেখ্য, জকসু নির্বাচনে ২১ পদে বিপরীতে মোট ২১১ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয়। ছাত্রীহলের ১৩ পদের বিপরীতে মোট ৩৮ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয়। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মোট ৪টি প্যানেল। আরেকটি আংশিক প্যানেল মনোনয়ন জমা দেয়। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জকসু নির্বাচন।