জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় আদালতে দুজন সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন জোবায়েদের ভার্সিটির ছোট ভাই সৈকত হোসেন ও বর্ষার মামা সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদুর রহমান।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দীন এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার এসআই আশরাফ হোসেন ওই দুই সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেছিলেন। প্রসিকিউশনের এএসআই শরিফুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
বর্ষার সাথে মাহির হোসেন ও জোবায়েদের প্রেম ছিল। এ দ্বন্দ্বে জোবায়েদকে হত্যা করা হয়েছে বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন বর্ষার মামা।
জবানবন্দিতে বর্ষার মামা ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক নৈশকালীন ডিউটি থাকায় বাসায় অবস্থান করছিলাম এবং ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ তার স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলার চাচাতো ভাই ফোন করে জানান, সিঁড়িতে কোনো একজন লোক পড়ে আছে। তারা তখন সাথে সাথে দরজা খুলে দেখেন সিঁড়ির মাঝামাঝি একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকজন জড়ো হয়ে যায় এবং সেখানে শনাক্ত হয়, তার ভাগ্নি বর্ষার প্রাইভেট টিউটর জোবায়েদ সাহেবের মৃতদেহ। তিনি তাৎক্ষণিক ৯৯৯-এ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে অবহিত করেন।
পরে তিনি জানতে পারেন তার ভাগ্নি বর্ষার সাথে মাহির নামক এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং জোবায়েদের সাথেও বর্ষার প্রেম ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে মাহির রহমান, জোবায়েদকে হত্যা করে ঘটনার দিন দৌড়ে পালিয়ে যায়।
আর জবানবন্দিতে সৈকত বলেন, ‘আমি জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির ২০২১-২২ সেশনের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী। জোবায়েদ ভার্সিটির বড় ভাই। আমি জোবায়েদ ভাইয়ের ক্লোজ ছোট ভাই হওয়াতে বর্ষা আমার নম্বর জোবায়েদ ভাইয়ের থেকে নেন। মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে হাই, হ্যালো কথাবার্তা হতো। ২-৩ মাস আগে বর্ষা আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তারপর থেকে বর্ষার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। জোবায়েদ ভাই প্রায় এক বছর ধরে বর্ষার বাসায় গিয়ে টিউশন পড়াতেন।’
সৈকত জানান, ভার্সিটি এলাকায় থাকাকালে গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটের দিকে বর্ষা তাকে মেসেঞ্জারে মেসেজ দেয়, ভাইয়া কই তুমি।
সৈকত জানান, ক্যাম্পাসে। বর্ষা বলে, স্যারের আম্মুর নম্বর আছে। সৈকত জানতে চায়, কেন কী হয়েছে? বর্ষা বলে, লাগবে তার।
ভাইয়ের কিছু হয়েছে কি না জানতে চান সৈকত। তখন বর্ষা জানায়, ভাইরে কে যেন মেরে ফেলেছে। সৈকত জানতে চান, মেরে ফেলেছে বলতে? বর্ষা জানায়, খুন করে ফেলছে।
সৈকত বলেন, আল্লাহ, কী বলো এসব? তারপর তিনি বর্ষাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। এরপর সৈকত ভার্সিটির বড় ভাইদের বিষয়টি জানান।
জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দুই দিন পর গত ২১ অক্টোবর নিহতের ভাই এনায়েত হোসেন বংশাল থানায় মামলা করেন। মামলার পর আসামি বর্ষা, তার প্রেমিক মো. মাহির রহমান ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান ২১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।