লিবিয়ায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করার সময় দালালচক্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন মাদারীপুরের তিন যুবক—ইমরান, মুন্না ও বায়েজিত। হত্যার পর তাদের মরদেহ সাগরে নিক্ষেপ করা হয় বলে জানা গেছে। ঘটনাটি এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে, স্বজনরা দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
মৃতদের স্বজনরা জানান, একটু ভালো থাকতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের হাজী মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে ইমরান খান। সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেবে এমন শর্তে প্রতিবেশী ও দালাল শিপন খানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২২ লাখ টাকায়। কিন্তু ইমরানকে লিবিয়া আটকে নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে আরো ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়।
সবশেষ ১ নভেম্বর লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করলে ভূমধ্যসাগরে গুলিতে মারা যায় ইমরান। পরে মঙ্গলবার ইমারনের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।
এদিকে, একইভাবে গুলিতে ওইদিন মারা যান রাজৈর উপজেলার দুর্গাবর্দ্দী গ্রামের ইমারত তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার, একই উপজেলার ঘোষলাকান্দি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বায়েজিত শেখ। তিন যুবকের মৃত্যুর পর মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় সাগরে।
এমন মুত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ঘটনা জানাজানি হলে ঘরে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা দালালক্রের পরিবারের লোকজন। তবে, দালাল শিপনের স্বজনদের দাবি, এই ঘটনায় জড়িত নন শিপন।
অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন শিপন। তিনি আত্মীয়-স্বজনরদের মাধ্যমে এলাকার যুবকদের খুব সহজে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখান তিনি।
এর আগেও মৃত্যুর মত এমন ঘটনা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তিনি।
ইমরানের বড়বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘শিপন দালাল আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। এই দালালের কঠিন বিচার চাই। আর সরকারের কাছে দাবি, আমার ভাইয়ের মরদেহটি যেন একবারের জন্য হলেও দেখতে পারি, সেই পদক্ষেপ নেওয়ার।’
ইমরানের আত্মীয় সাজ্জাদ মাতুব্বর বলেন, ‘দালাল শিপনের হাত অনেক লম্বা। এর আগেও একইভাবে কয়েকজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে সে। তার কোনো বিচার না হওয়ায় এই অপরাধ থামছেই না। আমরা তার ও তার সহযোগিদের কঠিন বিচার দাবি করছি।’
নিহত মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘দালাল শিপনকে ধারদেনা করে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি। আমার ভাগিনার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি মুন্নার মরদেহ দেহ দেশে ফিরিতে আনতে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি।’
বায়েজিতের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিভাবে মেনে নেব? দালাল প্রথমে স্বীকার যায়নি, পরে লিবিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়। এই দালাল এখন লাপাত্তা। এতগুলো টাকা দিয়ে ছেলের এমন মৃত্যুর শোক কিভাবে সইব?’
শিপনের চাচি সেতারা বেগম বলেন, ‘শিপন অনেক মানুষকেই নিয়েছে। কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা শিপন কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে এই ঘটনা আমরা এর আগে কখনোই শুনিনি। শিপন লিবিয়ায় অবস্থান করছে। ওর পরিবারের লোকজনও এখন বাড়িতে নাই। ঘরে তালা ঝুলছে। আমরা এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’
এদিকে, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণণের কথা বলছে পুলিশ। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দালালদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।’
শীর্ষনিউজ