Image description

রংপুর কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার সাজিদ খান বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তার মূল বেতন এক ধাপ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে তার বেতন ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা থেকে কমে ৪৫ হাজার ৩৩০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে সচিব মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী সাজিদ খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান ছিল। দীর্ঘ শুনানি, তদন্ত ও নথিপত্র পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(২)(ঘ) ধারায় তাকে লঘুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

সাজিদ খান খুলনা কর অঞ্চলের সার্কেল-১ কম্পানিজে দায়িত্ব পালনকালে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ করবর্ষের আয়কর নির্ধারণে গুরুতর অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির উৎসে কর্তিত কর যথাক্রমে ৬৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং ৮৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা;তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ছাড়াই করদাতাকে ক্রেডিট হিসেবে প্রদান করেন।

কোনো ধরনের যাচাই–বাছাই ছাড়াই আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪–এর ১৭৩ ধারা প্রয়োগ করে আইটি–৩০ সংশোধন করেন।এর ফলে বিতর্কিতভাবে কর ফেরতের জন্য ২০১৮–১৯ করবর্ষে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা এবং ২০১৯-২০ করবর্ষে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা তৈরি করেন।

দুই করবর্ষে কর ক্রেডিট ও কর ফেরত সংক্রান্ত নথিপত্রে একাধিক অসঙ্গতি ও কর্তৃত্বের অপব্যবহার দেখা যায়।তদন্ত কমিটি এসব অনিয়ম প্রমাণ পাওয়ার পর সাজিদ খানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।

বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়ায় সাজিদ খানের কাছ থেকে কৈফিয়ত (শোকজের জবাব) চাওয়া হয়। পরে ১৩ নভেম্বর তার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।শুনানিকালে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও, জমা দেওয়া নথি, তদন্ত রিপোর্ট ও বিভিন্ন পর্যায়ের যাচাই–বাছাই শেষে এনবিআর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে,“উপস্থাপিত প্রমাণাদি ও ব্যাখ্যা বিবেচনায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী বেতন গ্রেডে এক ধাপ অবনমিতকরণের লঘুদণ্ড আরোপ করা হলো।

কর প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তার এমন অনিয়মকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, করদাতাদের সঙ্গে স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও রাজস্ব আদায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের ব্যবস্থা একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।

এক জ্যেষ্ঠ কর–কর্মকর্তা বলেন, কর ক্রেডিট ও কর ফেরতের ক্ষেত্রে নিয়ম–নীতির বাইরে গিয়ে কোনো কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নিলে তা রাজস্ব ক্ষতি ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। সংশ্লিষ্ট মামলায় প্রমাণিত অনিয়ম দেশের কর ব্যবস্থায় আস্থা কমিয়ে দিতে পারে-তাই এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় এবং সময়োপযোগী।