চট্টগ্রাম নগর ও উত্তরের কয়েকটি উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে খুনোখুনি বেড়েছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি শঙ্কা জাগাচ্ছে।
বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে আসামি গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে পুলিশের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বিরোধ, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে আসা, রাজনৈতিক পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জমি নিয়ে বিরোধ, মাদক নিয়ে সংঘাত, পারিবারিক রেষারেষি; এমনকি কথা কাটাকাটির জেরেও খুনের ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ বলছে, বেশিরভাগ খুনের ঘটনাতেই তারা আসামি গ্রেপ্তার করেছে। তবে গত বছরের ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে আছে।
এছাড়া পুরনো সন্ত্রাসীরা ভোল পাল্টে নতুন পক্ষে যোগ দেওয়াও খুনোখুনি বাড়ার কারণ বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চট্টগ্রামে কয়েকটি ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ পর সম্প্রতি নগর পুলিশের কমিশনার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার তিনি এক বেতার বার্তায় বার্স্ট ফায়ারের কথা বলেন।
নগরীতে ‘গ্যাং ওয়ার’
চট্টগ্রাম নগরীতে সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ৫ নভেম্বর বয়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী এলাকায়। সেদিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগের সময় গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা।
এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহসহ আরও চারজন।
এর আগে সরোয়ারকে হত্যায় আরো দুইবার চেষ্টা করা হয়েছিল। তৃতীয়বারে খুনিরা সফল হয়।
অতীতে সরোয়ার ও তার বন্ধু নুরুন্নবী ম্যাক্সন ছিলেন চট্টগ্রামে আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের অন্যতম আসামি সাজ্জাদ হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
এই সাজ্জাদের সঙ্গে চলার পথে বিরোধ দেখা দিলে আলাদা দল গড়েন সরোয়ার। তখন সাজ্জাদের ডান হাত হয়ে ওঠেন ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ।
নগরীর বায়েজীদ, চান্দগাঁও এলাকার একটি বড় অংশে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সময়ে ছোট সাজ্জাদ ও সরোয়ারের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষের খবর শোনা যায়। বড় সাজ্জাদের হয়ে ছোট সাজ্জাদ এবং সরোয়ার নিজেই তার অনুসারীদের দিয়ে চাঁদাবাজি করতেন।
গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকালে চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় দোকানে বসে চা পানের সময় তাহসিন নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে কালো রঙের একটি গাড়িতে করে আসা লোকজন। সে ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ছোট সাজ্জাদ।
গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার হন ছোট সাজ্জাদ। এর পেছনে সরোয়ারের অনুসারীদের হাত ছিল বলে সাজ্জাদের পক্ষের লোকজনের সন্দেহ।
এরপরই ৩০ মার্চ চকবাজার থানার চন্দনপুরা এলাকায় প্রাইভেট কারকে ধাওয়া করে গুলি করা হয়। সেদিন চালকের পাশের আসনে বসা ছিলেন সরোয়ার। ওই রাতে গুলিতে মারা যান বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আব্দুল্লাহ।
২৪ মে রাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পুলিশের তালিকাভুক্ত আরেক সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে খুন করা হয়। আকবর অপরাধ জগতে ছোট সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ-সিএমপি কমিশনার মো. হাসিব আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইদানিং চট্টগ্রামে বিভিন্ন গ্যাংভিত্তিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। মহানগর বা জেলা বলে কোন কথা নেই। কেউ মহানগরে অপরাধ করে জেলার রাউজান বা ফটিকছড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করছে। এদের পেছনে আমরা কাজ করছি।”
চালিতাতলীতে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে গুলি করে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় সরোয়ার খুন দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্দ্বের বহি:প্রকাশ। এখানে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। খুনিরা ওই সময় প্রচার সমাবেশের ভেতরে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে অংশ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা যুক্ত তাদের গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করছি।”
‘রং পাল্টেছে অপরাধীরা’
বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে সিএমপির আওতাধীন এলাকায় গত বছর খুনের ঘটনায় ৯০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে অগাস্টে ২০টি এবং জুলাইতে ১০টি খুনের ঘটনা ঘটে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত সিএমপিতে খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬১টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি এপ্রিলে ১১টি খুনের ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামে ১৩ নভেম্বর রাতে ছুরিকাঘাতে খুন হন আকাশ ঘোষ। টাকা চাওয়া নিয়ে এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪ জন।
এর আগে ৭ নভেম্বর রাতে হালিশহরের মাইজপাড়ায় নিজ ঘরের সামনে ছুরিকাঘাতে মো. আকবর খুন হন। কথা কাটাকাটির জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশের ভাষ্য।
তার চার দিন আগে ৩ নভেম্বর বিকালে পাঁচলাইশ হামজারবাগ আবাসিক এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন হাসিব নামে এক যুবক।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অপরাধীদের গ্রেপ্তারও করেছে। কোন সন্ত্রাসী যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অপরাধজনিত ভীতি তৈরি করতে না পারে এজন্য পুলিশ কাজ করছে।”
সাম্প্রতিক সময়ে খুন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “গত বছরের ৫ থেকে ৮ অগাস্ট পর্যন্ত সিএমপির বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ লুট হয়েছে। সেসব সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে বলে মনে হয়। এবং সেসব দিয়ে সন্ত্রাসীরা অপরাধ করছে না, সেটা বলা যাবে না। এসব অস্ত্র উদ্ধার করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের।”
এছাড়া গত ১৭ বছরে এক ধরনের অপরাধ ছিল তুলে ধরে সিএমপি কমিশনার বলেন, “ওইসময় অনেকেই আত্মগোপনে ছিল। তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আগের অপরাধীরা রং পাল্টে বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে পড়ছে। এটাও একটা কারণ হতে পারে।”
রাউজানে ‘রাজনৈতিক’ খুন
গত বছরের ৫ অগাস্টের পর থেকে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ১৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যারমধ্যে কমপক্ষে সাতটি হত্যা রাজনৈতিক ও স্থানীয় আধিপত্যের জেরে ঘটেছে বলে পুলিশের দাবি।
এছাড়াও পারিবারিক কলহে তিনজন এবং অন্যান্য কারণে পাঁচজন খুন হয়েছে।
এসব ত্যাকাণ্ডে মোট ৩৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলার উত্তরের উপজেলা রাউজান হয়ে পাবর্ত্য জেলা রাঙামাটিতে যেতে হয়। পাহাড়ঘেরা রাউজান বহু বছর ধরে রাজনৈতিক বিরোধের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত।
চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগের কর্মী মোহাম্মদ হাসানকে।
২৪ জানুয়ারি সেই ইউনিয়নের আছাদ আলী মাতবর পাড়ায় জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় শুঁটকি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যা করে মুখোশ পরা অস্ত্রধারীরা। চাঁদার জন্য তাকে হত্যা করা হয় বলে দাবি পুলিশ ও পরিবারের।
১৫ মার্চ রাতে হলদিয়া ইউনিয়নের আমীর হাট বাজারে সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ব্যানার লাগানো এবং ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে যুবদল কর্মী কমর উদ্দিন জিতুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সৌদি প্রবাসী জিতু ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন।
এরপর ১৯ এপ্রিল রাতে বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিবুল্লাহ পাড়ায় যুবদল কর্মী মো. আবদুল্লাহ মানিককে ভাত খাওয়ার সময় গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর এই অনুসারী গত বছরের ১৭ অগাস্ট দেশে ফিরেছিলেন।
এর তিন দিন পর ২২ এপ্রিল গাজীপাড়া বাজারে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসা ১০-১২ জন অস্ত্রধারী যুবদল কর্মী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। তিনিও গিয়াস কাদেরের অনুসারী ছিলেন।
কদলপুর ইউনিয়নের ঈষাণ ভট্টের হাটে ৬ জুলাই দুপুরে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল নেতা মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসা হত্যাকারীদের মধ্যে দুইজন ছিল বোরকা পরিহিত। তিনিও গিয়াস কাদেরের অনুসারী ছিলেন।
এর মাত্র চারদিন পর ১০ জুলাই দুপুরে পার্শ্ববর্তী রাঙামাটি জেলার কাউখালীর পশ্চিম বেতবুনিয়া থেকে রাউজানের কদলপুরের বাসিন্দা যুবদল কর্মী দিদারুল আলমের লাশ উদ্ধার করা হয়। দিদারুল ছিলেন খুন হওয়া মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সহযোগী। তবে রাঙামাটির সীমানা থেকে লাশ উদ্ধার হওয়ায় পুলিশের তালিকায় এটি রাউজানের ঘটনা হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হয়নি।
মাস দুয়েক পরে ২৫ অক্টোবর বিকালে পৌরসভার চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে যুবদল কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রায় ১২ বছর কারাগারে থাকার এই যুবদল কর্মী গত বছরের ৫ অগাস্টের পর মুক্ত হন।
আলমের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বিবৃতি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার দাবি করেন।
তার আগে গত বছরের ২৮ অগাস্ট রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমত পাড়ায় সড়কে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শ্রমিক লীগের বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানকে (৩৫)।
১ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর বাগান বাড়ির গরুর খামার থেকে কৃষি শ্রমিক মুহাম্মদ ইউসুফ মিয়ার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
আর ১১ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর খালে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওলামা লীগের সদস্য আবু তাহেরের মরদেহ।
হাটহাজারীতে পাঁচ সপ্তাহে ৮ লাশ
রাউজানের পার্শ্বর্বতী হাটহাজারী উপজেলায় গত পাঁচ সপ্তাহে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি খুনের ঘটনা বলে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ৭ অক্টোবর বিকালে রাউজানের বাগোয়ানে নিজের কৃষি খামার থেকে নগরীতে ফেরার সময় হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে একদল অস্ত্রধারী গাড়িতে থাকা ব্যবসায়ী ও রাউজান বিএনপির কর্মী আবদুল হাকিমকে (৫২) গুলি করে হত্যা করে।
পরে পুলিশ বলেছে, কর্ণফুলী নদীর পাড়ের বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে ভাড়াটে খুনি দিয়ে তাকে খুন করা হয়।
হাটহাজারীর চৌধুরীহাটে ১৪ অক্টোবর রাতে চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি অপু দাশ ছুরিকাঘাতে নিহত হন। গুরুতর আহত হন অপুর সাথে থাকা ছাত্রদলের কর্মী মুহাম্মদ তামিম। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এরপর ২১ অক্টোবর হাটহাজারী পৌরসভায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুহাম্মদ তানভীরকে (১৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় স্কুলছাত্রদের একটি পক্ষ জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে।
তারপর ১০ নভেম্বর রাত থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও ভুজপুরে গত কয়েকমাসে বেশকিছু খুন ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে আসামি গ্রেপ্তার করেছে।
“হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে ব্যক্তিগত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা, আকস্মিক আক্রোশের বশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে রাজনৈতিক কারণে হত্যাকাণ্ড কম। যারা অপরাধ করছে তাদের ‘ক্রিমিনাল হিস্ট্রি’ তেমন নাই।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “হাটহাজারীতে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি লাশ উদ্ধারের ঘটনার বেশিরভাগই দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। তারপরও আমরা লাশগুলো ময়নাতদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“অপরাধ কমানোর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত টহল জোরদার করার সাথে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা দরকার।”
‘রাউজানে অপরাধে ছয় গ্রুপ’
গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, “অপরাধ বিশ্লেষণ করে দেখেছি, রাউজানে ছয়টির মত গ্রুপ বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘টার্গেট কিলার’ বা ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করে।
“তারা যদি পরবর্তীতে আবারো কোনো অপরাধ সংঘটন করতে যায়, আমরা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে যাব। রাউজানসহ চট্টগ্রামে হয় সন্ত্রাসী থাকবে, না হয় পুলিশ থাকবে। জনগণের নিরাপত্তা যারা ভঙ্গ করবে তাদের আমরা থাকতে দিব না।”
অপরাধীরা তাদের অপরাধ ঢাকার জন্য রাজনীতিকে আশ্রয় হিসেবে গ্রহণ করে বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের হিসেবে রাউজানে হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে ৭টি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। বাকি ৯টি হত্যকাণ্ডের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, গরু চুরি করতে গিয়ে, পরকীয়ার জেরে, পারিবারিক বিরোধ ও মদপান করে পানিতে পড়ে মৃত্যুর মতো ঘটনাও আছে বলে দাবি পুলিশের।
প্রত্যেকটি খুনের ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে দাবি করে জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, “প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছে।”
