স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক দুই ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের নামে থাকা সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি পাঠানো এ নোটিশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দায়িত্ব পালনের সময় অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন, অনিয়ম ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পদের উৎস ও বিবরণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানকে এর আগে দুদক প্রাথমিকভাবে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল, যেখানে তাদের কাছ থেকে আয়-ব্যয়ের প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই দুদক পরবর্তীতে সম্পদের বিস্তারিত হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায়।
দুদক জানায়, সম্পদের হিসাব না দিলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাত-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি বলছে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য ও সরবরাহ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের সম্পদ যাচাইপ্রক্রিয়া শুরু করে দুদক।
এর আগে গত ২১ মে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) তুহিন ফারাবী (ছাত্র প্রতিনিধি), ডা. মাহমুদুল হাসান ও এনসিপির বহিষ্কারকৃত যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাউদ্দীন তানভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ওই দিন তদবির, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে কমিশনের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত সংক্রান্ত দু’টি শাখার কর্মকর্তারা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে তাদের ওই সব সম্পদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
তুহিন ফারাবীর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দপ্তরে কাজ করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নামে-বেনামে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিজের এবং স্ত্রী ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, তার ও স্ত্রীর আয়করের হালনাগাদ নথির সত্যায়িত ফটোকপি, নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছিল।
ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার নিজের, স্ত্রী ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট (যদি থাকে), আয়কর নথি, ব্যাংক হিসাবের বিবরণীসহ হাজির হতে বলা হয়।
এর পর গত ২৭ মে তুহিন ফারাবী ও মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে দেশত্যাগ ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লকের নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন গালিব।