ফরিদপুরের হাট-বাজারগুলোতে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত রেড়েছে। বর্তমানে খুচরো দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে; যা গত এক সপ্তাহ আগেও ছিল প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
তবে প্রতিদিনই বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের কিছুটা সংকট তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আবার আমদানি শুরু হলে পেঁয়াজের দাম নেমে যাবে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, মৌসুমের শেষের দিকে কৃষকের কাছে পেঁয়াজ নেই। বেশিরভাগ পেঁয়াজ এখন আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে। ফলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জেলা সদর, কানাইপুর, সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারী, সাতৈর, মধুখালী বাজারে খোঁজ নিয়ে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ টাকায়।
আড়তদাররা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। গত মৌসুমের পেঁয়াজ বিক্রি শেষের পর্যায়ে। তাছাড়া মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের বাজার অস্থির থাকতে পারে।
বোয়ালমারীর সাতৈর বাজারের ক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, খুচরা বাজারে ৯০ থেকে ১শ টাকা কেজি দরে ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
সালথা উপজেলার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে দাম এভাবে বাড়বে ভাবতেও পারিনি। কয়েক মাস সংগ্রহে রেখে ১০ দিন আগে ৪০ মণের মতো পেঁয়াজ ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ (কেজি ৬৫ টাকা) দরে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন শুনি দাম বেড়ে গেছে।
সাতৈর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন বলেন, অনেক লোকসান হয়ে গেল। ১৫ দিন আগে প্রায় ১শ মন পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছি। অথচ পেঁয়াজের মণ এখন দেখছি ৪ হাজার টাকা (কেজি ১০০ টাকা)।
সাতৈর বাজারের ব্যবসায়ী সালাম শেখ বলেন, আমদানি করা লাগবে না। দেশে যে পেঁয়াজ আছে এতেই হয়ে যাবে। তবে ১০০ টাকা পেঁয়াজের কেজি এটা কোনো ঘটনা না। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমে যাবে।
সালথা বাজারের আড়তদার আক্কাছ শেখ বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দুই দিন আগে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ৮শ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কিনেছি। গতকাল থেকে বাজার আবার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আজ প্রতি মণ বড় ও মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ ৩ হাজার ৮শ টাকা দরে কেনা হচ্ছে।
তবে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় কৃষকরা বেশ খুশি। শেষ সময়ে কিছু কৃষক বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরেছেন। তাদের কথা এ বছর লাভের মুখ দেখলাম। মাঝে মধ্যে তো আমাদের উৎপাদন খরচও উঠে না। এ বছর শেষের দিকে ভালো দাম পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও দেড় মাসের মতো সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে এ কয়েক দিন পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেট ও বাজার অস্থিরতার বিষয়ে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, কৃষকরা এরই মধ্যে হালি পেঁয়াজ রোপণের জন্য বীজ থেকে চারা তৈরি শুরু করেছেন। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে সময় লাগবে। এ বছর ফরিদপুরে পাঁচ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।