Image description
 

স্বামীকে হারিয়ে পৃথিবীটা যেন মুহূর্তেই থেমে গিয়েছিল আইরিন আক্তারের। ফার্মগেটের ব্যস্ত রাস্তায় মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে মৃত্যু হয়েছিল তার স্বামী আবুল কালামের।

দুই সন্তান নিয়ে এখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পেরোচ্ছেন এই মা। তবে এবার নতুন এক আশার আলো জ্বলেছে– উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী মেট্রোরেলে চাকরি পাচ্ছেন তিনি।

মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, নিহত আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তারকে ১৬তম গ্রেডে চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিকভাবে তার জন্য তিনটি পদ বিবেচনা করা হচ্ছে– টিকিট মেশিন অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর ও কাস্টমার রিলেশন সহকারী। সব পদেই মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকার বেশি।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, আইরিনের স্নাতক ডিগ্রি এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাই উচ্চমাধ্যমিক পাস সনদের ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নভেম্বরের মধ্যেই নিয়োগপত্র হাতে পাবেন তিনি। গত ২ নভেম্বর আইরিন তার সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ডিএমটিসিএল কার্যালয়ে দেখা করতে যান। সেখানে চাকরির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে আশ্বস্ত করা হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়।

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ফার্মগেট স্টেশনের পশ্চিম প্রান্তে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে হঠাৎ নিচে পড়ে যায় ভারী বিয়ারিং প্যাড। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই থেমে যায় পথচারী আবুল কালামের জীবন।

এ ঘটনার পর মরদেহ দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সেখানেই তিনি নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেন এবং আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তারকে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী মেট্রোরেলে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন।

এরই মধ্যে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ঘোষিত পাঁচ লাখ টাকার সহায়তাও দেওয়া হয়েছে বলে জানায় ডিএমটিসিএল। পাশাপাশি, নিহতের পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। যেখানে ব্যাংকে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ রেখে মাসে মাসে পরিবারটি সহায়তা পাবে।

আবুল কালামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। ছোটোবেলায় মা–বাবাকে হারিয়ে ভাইবোনদের আশ্রয়ে বড় হয়েছিলেন তিনি। জীবনযুদ্ধের কঠিন পথে পরিশ্রম করে সংসার টেনে নিচ্ছিলেন। কিন্তু গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে তার মৃত্যু হলে পুরো পরিবারটি অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়।

সরকার এ ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়) প্রকৌশলী শেখ মইনউদ্দিন। মেট্রোরেলের ইতিহাসে এমন দুর্ঘটনা বিরল হলেও, এবার ঘটনাটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্ন তুলেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ইনসিডেন্টের পরে আমরা নিজেরা ইনভলভ হয়েছি ওই ভিক্টিমের সঙ্গে। যতটুকু করার, তার হাসপাতাল নেওয়া থেকে আরম্ভ করে জানাজা পর্যন্ত যত কিছু আছে, আমাদের ডিএমটিসিএল এবং মিনিস্ট্রি থেকে উভয়ে মিলে আমরা সমস্ত কিছু এরেঞ্জ করেছি। আর কিছু সাহায্য হিসেবে উপদেষ্টা স্যার মিনিস্ট্রি থেকে দিয়েছেন। এবং অনেকে এটাকে জীবনের মূল্য বলছে, আসলে এটা জীবনের মূল্য হিসেবে দেওয়া হয়নি। ওটা তাকে ইমিডিয়েট সাহায্য হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আর আমরা লং যে সলিউশনটা খুঁজেছি, উনার ফ্যামিলিকে কীভাবে পারমানেন্টলি সাহায্য করা যায়, সে জন্য উনার ওয়াইফের সঙ্গে গত সপ্তাহে আমার মিটিং হয়েছে। উনার যোগ্যতা অনুযায়ী ইমিডিয়েট একটা চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। উনি যখন উনার সার্টিফিকেট এবং ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড, সবকিছু দিয়ে দেবেন (হয়তো অফিসে পৌঁছে গেছে), এটা দেওয়ার পরে আমরা তার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করছি।

ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, উনার হয়তো আরও ছয় মাস লাগবে অনার্স কমপ্লিট করতে। অনার্স কমপ্লিট করলে, ওই যোগ্যতা অনুযায়ী যতটুকু চাকরিতে তাকে পদোন্নতি দেওয়া যায় বা করা যায়, ওই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, প্রভিশন রাখা হয়েছে।