Image description
 

উত্তরপূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে। এর ফলে রাস্ত ঘাটে পড়ে আছে শত শত মানুষের লাশ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে অনেকে জীবন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। এতে মৃত মানুষগুলোকে দাফন করার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে লাশের গন্ধ। মুসলিম দেশ সুদানে এমনই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। তবে এই ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহ যুদ্ধের পেছনে রয়েছে দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াই। যারা এক সময় ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কিন্তু আজ ক্ষমতার জন্য তারা একে অপরের চরম শত্রুতে পরিণত হয়েছে। আর এর বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহানের নেতৃত্বাধীন সরকারি সশস্ত্র বাহিনী এসএএফের বিরুদ্ধে লড়ছে তারই এককালের বন্ধু মোহামেদ হামদান হেমেতি দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস আরএসএফ। এই সংঘাতের ফলে দেশটিতে দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ।

সুদানে সংঘাত শুরু হয় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল। দেশটিতে ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা তৎকালীন একনায়ক ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী এসএএফ ও আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফের দুই জেনারেল। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে বশিরের বিরুদ্ধে গোটা সুদানজুড়ে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের ফলে সৃষ্ট সংঘাতের সুযোগ নিয়ে ক্যুর মাধ্যমে বশিরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন বুরহান ও দাগালো।

 

একনায়ক বশিরের পতনের পর ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক কাউন্সিল টিএমসির নেতৃত্ব দেন সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান। তার সহকারী হিসেবে কাজ করেন আরএসএফের প্রধান দাগালো। এক পর্যায়ে নতুন করে দেশটিতে বেসামরিক সরকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের চাপে পড়ে দুই জেনারেল ২০১৯ সালে বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু ২০২১ সালে বেসামরিক সরকার ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবদালা হামদককে গ্রেপ্তার করে নতুন একটি সার্বভৌম কাউন্সিল গঠন করেন তারা।

 

তবে তাদের গঠিত সামরিক কাউন্সিলের ওপর জাতিসংঘের বেধে দেওয়া কাঠামো মেনে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার চাপ আসতে থাকে। এতে গভীর এক সংকটে পড়ে যায় আরএসএফ প্রধান দাগালো। বুঝে যান তার বাহিনী সরকারের সঙ্গে যুক্ত হলে দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বেন তিনি। আর এরপরই ২০২৩ সালের এপ্রিলে রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে আরএসএফ। যা রূপ নিয়েছে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে।

 

এদিকে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছেন মোহামেদ হামদান হেমেতি দাগালো। তিনি আরব আমিরাতের কাছ থেকে পাওয়া ভারী অস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় সফলতা পেয়েছেন। দখলে নিয়েছেন সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের। আর এ কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে আরএসএফ।