Aman Abdullah (আমান আবদুল্লাহ)
সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দিন প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বলেছেন সাংবাদিক ইমরান আনসারী। নিউ ইয়র্কের বাংলা পত্রিকা ঠিকানা যে খামুকে দশ হাজার ডলার বেতন এবং তিন হাজার ডলার বাসা ভাড়া দেয়, এটা কোথা থেকে দেয়?
নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, সিডনি এসব শহরে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রচুর সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন। স্থানীয় বাংলাদেশী দোকানদাররা এসব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। এসব পত্রিকাকে ঘিরে ছোটখাটো একটা অর্থনৈতিক চক্র কার্যকর আছে। কিছু মানুষের অন্ন সংস্থানও হয় বটে। খলিল বিরিয়ানির স্মরণ করতে পারেন। মোটাদাগে এই হলো পত্রিকাগুলোর আয়ের উৎস। পাশাপাশি পত্রিকাগুলোতে স্থানীয় জ্ঞানীগুণী প্রবাসী বাংলাদেশী পন্ডিতদের লেখা সব রাবিশ ছাপা হয়। এসব পত্রিকা টাকা দিয়ে কিনতে হয়না। এগুলো বাংলাদেশী দোকানগুলোতে এক পাশে রাখা হয়। সবাই ফ্রি ফ্রি নিয়ে যায়। আপনার বাড়ি যদি বড় হয় থুক্কু আপনি যদি একজন একনিষ্ঠ জ্ঞানপিপাসু পাঠক হন তাহলে একসাথে পাঁচটা বা দশটা পত্রিকাও নিয়ে যাবেন। সবাই এভাবেই নেয়।
বাংলাদেশীরা মূলত এসব পত্রিকা থেকে মাইগ্রেশন এজেন্ট, লয়ার, ট্যাক্স এজেন্ট/একাউন্টেন্ট, গাড়ির মেকানিক, বাংলা রেস্টুরেন্ট এসব বিজ্ঞাপন দেখে। এছাড়াও বাসার প্যানট্রিতে আলু পেয়াজের পাঁচ কেজি বা দশ কেজি বস্তা রাখার সময় মাটিতে যেন ছোকলা না ছড়ায়, সেই কাজে এসব পত্রিকার উত্তম ব্যবহার হয়। ব্যাবহৃত ডেকচিপাতিল রান্নাঘরের তাকে রাখার সময় নিচের কালি যেন না লাগে, ময়লা মুড়িয়ে ফেলার জন্য, জুতার নিচের ধুলোমাটি বাসার ফ্লোরে ছড়ানো প্রতিহত করার জন্য, গ্যারেজে বিছানোর জন্য যেন বাইরে থেকে আসার পর চাকার পানি ও ধুলা মাটিতে কম লাাগে ইত্যাদি দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে এইসব ফ্রি সাপ্তাহিক পত্রিকার কাগজগুলো যে কোন প্রবাসী পরিবারে অসীম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে এসব পত্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা অন্য জায়গায়। যারা এসব পত্রিকা চালায় তারা বিভিন্ন জায়গায় নিজেদেরকে মতিউর রহমান, মাহফুজ আনাম, আবুল আসাদ, মাহমুদুর রহমান, আলফাজ আনাম, শরীফ হাসান, অলিউল্লাহ নোমান প্রভৃতি ভূমিকায় এবং চরিত্রে উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশে পাত্তা না পাওয়া প্রবাসী পন্ডিতরা মনের সুখে রাজনীতি ও সাহিত্য করেন, ছোট্ট কমিউনিটিতে নিজেদেরকে বদরুদ্দিন উমর এবং সুনীল গঙ্গোপধ্যায় বানিয়ে তুলেন।
তবে সমস্ত বিজ্ঞাপন মিলিয়েও এ পত্রিকাগুলো কখনো কাগজ, ডিজাইন এবং ছাপার খরচ পুরোটা তুলতে পারে না। সুতরাং এইসব জ্ঞানীগুণী সাংবাদিক ও লেখকরা, যারা সবাই অন্যান্য পেশা যেমন টেক্সি/উবার ড্রাইভিং, সেভেন ইলেভেন দোকানদার, রেস্টুরান্টিয়ার, মানি এক্সচেঞ্জ ও আদম আমদানি, শিক্ষকতা ইত্যাদি নানা কাজকর্ম করেন, সেইসব মূল পেশা থেকে অর্জিত টাকা নিজেদের পত্রিকায় দিয়ে কন্ট্রিবিউট করেন। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান উনারা, অনেক মহান। এসব দেশের সরকারগুলোর মাল্টিকালচারাল ডিপার্টমেন্ট, ফরেন/মাইগ্রেশন/হেলথ অফিস বা কাউন্সিল থেকে কিছু গ্র্যান্টস ও পান। মন্ত্রী এমপিদের সাথে চলাফেরা করার সুযোগ পান। সব মিলিয়ে যে ইনফ্লুয়েন্সটা উনারা পান, সেইটা আপনি পাবেন না। এই হলো সারমর্ম।
এখন এইরকম একটা কমিউনিটি পত্রিকা যদি খামুকে দশ হাজার ডলার বেতন দেয়, ঘটনাটা হয়ে দাঁড়ালো আপনার প্রতিবেশী পঙ্গু মানুষটির পরিবার, যে পরিবারের পুরোটাই আপনার সদকা দিয়ে চলে, যে পরিবারের মহিলাটি আপনার বাসায় কাজের বুয়ার কাজ করে, সেই পরিবারের ছেলেটি যদি হঠাৎ করে একদিন সকালে পোর্শে গাড়ি নিয়ে ঘুরাঘুরি শুরু করে, এমন। সেই পোর্শে গাড়িটা আবার রাতে বস্তির সামনে পার্ক করা থাকে। দেখতে এমনই সুন্দর। অথবা যেন কুষ্টিয়ার হরগঙ্গাপুর থানার সরকারী স্কুলের হেডমাস্টার মল্লিকবাবু চাঁদা তুলে এবং নিজের টিউশনির বেতন মিলিয়ে মাসিক করতোয়ার স্রোত নামক যে সাহিত্য পত্রিকাটি প্রকাশ করেন, সেই পত্রিকা যেন মাসিক দশ লাখ টাকা বেতনে তাসনিম খলিলকে সম্পাদক করে নিয়ে গেলো।
ডয়চে ভেলেতে ছিলো জার্মান সরকারের দেয়া বেতন, কিন্তু ঠিকানা কিভাবে খামুকে নিউইয়র্কে রিলোকেশন এবং হাইয়ার সেলারি দেয়? একমাত্র সম্ভাব্য উত্তর, বাংলাদেশ থেকে আসা আওয়ামী টাকা। আওয়ামী টাকায় নাচার দীর্ঘ ইতিহাস আছে খালেদ পুতুলের।
ফলো দা মানি, পাপেট মাস্টার বের হয়ে আসবে।