Image description

বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন যেন এক নতুন ‘তথ্য যুদ্ধের ময়দান’। দিন দিন বাড়ছে ভুয়া ফটোকার্ড এবং এআই সৃষ্ট ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা, যেখানে মিথ্যাই হয়ে উঠছে প্রচারের হাতিয়ার, আর সত্য হারিয়ে যাচ্ছে অ্যালগরিদমের ভিড়ে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কালিমালিপ্ত করা, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে বিতর্কিত করা, কিংবা কোনো ইস্যুতে জনমতকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এখন ব্যক্তিগত এবং সংগঠিতভাবে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তিকর কার্ড, ভিডিও ও এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট, যেগুলো দেখতে অবিকল মূলধারার গণমাধ্যমের প্রকাশনার মতোই। এসবই যেন বিশ্বাসযোগ্যতার ছদ্মবেশে ছড়ানো এক বিভ্রান্তির ফাঁদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও ক্যানভা বা ফটোশপের মতো বিভিন্ন অনলাইন টুলস হাতে থাকায়, এখন যে কেউ কয়েক মিনিটেই বানিয়ে ফেলছে এমন ভুয়া কার্ড, ছবি, অ্যানিমেশন এবং এমনকি ছোট ভিডিও, যা দেখে প্রথমেই বিশ্বাস করে ফেলে যেকেউ। এ কাজে জড়িতদের অনেকে নিজেদের কর্মকাণ্ডকে ‘বিনোদন’ বলে দাবি করছে! কিন্তু বাস্তবে, এই তথাকথিত ‘বিনোদন’ এখন সমাজে নিঃশব্দে যেন বিষ ছড়াচ্ছে। 

এছাড়া একে অপরকে ঘায়েল করার নামে ব্যক্তিগত কিংবা মূলধারার সংবাদমাধ্যমের আদলে গড়ে ওঠা শত শত ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের এ ‘ভুয়া কার্ড ছড়ানো’ সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো— সাধারণ মানুষ এখন ধরতেই পারছে না, কোন কার্ডটি সত্য আর কোনটি সাজানো মিথ্যা। মূলধারার গণমাধ্যমের লোগো, রং, টাইপোগ্রাফি এমন নিখুঁতভাবে নকল করা হচ্ছে যে, মুহূর্তেই তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। ফলে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ কর্মযজ্ঞে যুক্ত হয়েছে, নারীদের নিয়ে কটূক্তি এবং ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার উসকানিও।

“আমাদের দেশের বিরাট একটা অংশ এসব না জেনে-বুঝে বা তথ্য ভ্যারিফাই না করেই বিশ্বাস করে। যার কারণে, অপতথ্য ছড়িয়ে তারা সুযোগ পায়” - শিক্ষক, ক্রিমিনোলজি বিভাগ, ঢাবি। 

অনেকেই বলছেন, সরকারের নীরবতা, উদাসীনতা ও কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাবে এই ভুয়া তথ্য ও এআই-ভিত্তিক অপপ্রচার এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক যোগাযোগব্যবস্থার জন্য এক বড় হুমকি। এর ফলে সত্য-মিথ্যার সীমারেখা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, আর তার জায়গা নিচ্ছে এক ভয়াবহ মিসইনফরমেশন ইকোসিস্টেম, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতি ও সামাজিক সংহতির জন্য এক বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি- অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মিডিয়া লিটারেসি সম্পর্কে অজ্ঞতা, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল, কর্মসংস্থান-শিক্ষা-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্ব না দেওয়া, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা এবং সরকারের উদাসীনতার কারণে দিন দিন এসব অপপ্রচারের পরিমাণ বাড়ছে।  

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘাঁটাঘাঁটি দেখা যায়, গত ৩ অক্টোবর ইকবাল টিভি নামক এক প্লাটফর্মের লোগো ব্যবহার করে বানানো একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে শেখ হাসিনার সৈনিক নামে এক পেজ। সেই কার্ডে লেখা- ‘আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই - নির্বাচন হাইকমিশনার’। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে রিউম্যার স্ক্যানার নামে একটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান। সে অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি ওই বক্তব্য দেননি। 

“আমাদের দেশে বেকারত্ব, অর্থনীতি ও শিক্ষাকে কখনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যার কারণে, ‘অপ্রয়োজনীয়’ একটি জনগোষ্ঠী আপনা-আপনিই তৈরি হয়ে গেছে। আর তারাই এসব কাজে জড়াচ্ছে। তাছাড়াও, আইনের প্রয়োগ না থাকা এই অবস্থাকে দিচ্ছে বেপরোয়া গতি” - সমাজ বিশ্লেষক ও শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

এডিট করা আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে দিয়ে কুরুচিপূর্ণ, অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য করায় সাংবাদিক মুজতবা খন্দকারসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে গত ৩ নভেম্বর শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামী। এর আগেও তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর কন্টেন্ট ও লেখা ফেসবুকে দেখা গেছে। তার মতো বামপন্থি নারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়েও বিভিন্ন সময়ে বুলিং করতে দেখা গেছে। 

গত ১ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠ নকল করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরির অভিযোগ করে দলটি। বিএনপির দাবি, কিছু কুচক্রী মহল পুরোনো প্রেস কনফারেন্সের ছবি ও বক্তব্য এডিট করে এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার কণ্ঠ নকল করেছে। অন্যদিকে, ভিডিওটিতে দেখানো হয়- বিএনপি মহাসচিব আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করেছেন। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের কিছু নজির

 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে উদ্ধৃত করে ‘কোনোভাবেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায়না জামায়াতে ইসলামী’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার ফটোকার্ডের ডিজাইন সংবলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়। 

এরপর তারই উদ্ধৃতি ব্যবহার করে আমার দেশ পত্রিকার আদলে একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়। তার উদ্ধৃতি হিসেবে সেখানে লেখা হয়, ‘শেখ মুজিব সম্মানিত ব্যক্তি, তার ছবি টাঙানোর বিধান থাকলে সমস্যা কী?’ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, এই দুটি প্রচারণাই ছিল মিথ্যা। তারপরও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর অনেক নেতাকর্মীকে এগুলো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে দেখা যায়। 

“ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তথ্য-অপতথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তথ্য-প্রযুক্তিকে মানুষের মাঝে যেমন সহজলভ্য করতে হবে, ঠিক তেমনই ব্যবহারকারীদের মাঝে সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ও লার্নিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে” - অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, দেশের প্রথম সারির পত্রিকা, অনলাইন, টেলিভিশনের লোগো কপি করে তৈরি হয়েছে শতাধিক ফেসবুক পেজ ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। বিনোদনের উদ্দেশ্যে এসব পেজ তৈরি করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোর ভুয়া ফটোকার্ড ও ভিত্তিহীন কন্টেন্টে বিভ্রান্ত হচ্ছে সর্বসাধারণ। এগুলোর মধ্যে যমুনা টিভির লোগো নকল করে Anwar Tv, ইংরেজি দৈনিক The Daily Star-কে নকল করে The Delhi Star, দৈনিক মানবজমিনকে নকল করে মনিরজমিন, আমার দেশকে নকল করে বাপের দেশ, প্রথম আলোকে নকল করে প্রথম আলু পেজ অন্যতম। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম সোহাগ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, দিন দিন নামে-বেনামে সামাজিক মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচারের প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথমত, যারা এগুলো করছে তারা নিজেরাও জানে যে, আমাদের দেশের বিরাট একটা অংশ এসব না জেনে-বুঝে বা তথ্য ভ্যারিফাই না করেই বিশ্বাস করে। যার কারণে, অপতথ্য ছড়িয়ে তারা সুযোগ পায়। দ্বিতীয়ত, এসমস্ত সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদের শাস্তি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সমাজ বিশ্লেষক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও অপ্রীতিকর তথ্য ছড়ানোর সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর দিক হলো— এগুলোর মাধ্যমে নীতি-নৈতিকতাবিহীন একটি প্রজন্ম গড়ে উঠছে, যেখানে মিথ্যা ও অর্ধসত্য গুরুত্ব পাচ্ছে, আর প্রকৃত অপরাধ ও অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। তৃতীয় বিশ্বের, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের, মানুষ মেটাফোরিক কিংবা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কন্টেন্ট বানাতে গিয়ে কোথায় থামতে হবে বা কতটুকু করলে নীতিবিরোধী হবে, তা জাতিগতভাবে তারা অর্জন করতে পারেনি।

তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় সরকার প্রধানকেও ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন কিংবা এআইভিত্তিক নেতিবাচক কন্টেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের কনটেক্সটে তারাও একটা লিমিট রাখে। এমনকি, তাদের রিলিজিয়াস বা সোশ্যাল ভ্যালুজ পোস্ট-মর্ডানিটির নেতিবাচক দিকগুলোর সাথে কম্প্রোমাইজ করতে গিয়ে তাদের কাছে নুডিটি (নগ্নতা) একরকম স্বাভাবিক বিষয়। এসব দেশে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে অস্ত্র কেনা যায়, কিন্তু আমাদের দেশে গাজা বহন করাও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। পাবলিক স্পেসে প্রকাশ্যে ধূমপান অপরাধ হলেও তা নারী ধূমপায়ীর জন্য ‘মহা অপরাধ’। 

তার মতে, পশ্চিমা বাস্তবতার বিপরীতে, তাদের মতো এসব কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের চর্চা বাংলাদেশে  সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও যখন সমস্যাটি বাড়তে শুরু করেছে, তখন সবার মাঝেই একটা নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে, কেউ উচ্চমাত্রায় সফল বা পরিচিত হলে তার নিরাপত্তাহীনতা বেশি হয়ে যাচ্ছে, যেটি হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু এটা হচ্ছে জাতি গঠনের আগেই ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ইনসেন্সিবল জনসাধারণের কারণে। 

অপতথ্য ছড়ানোর অপতৎপরতা বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, দেশে আমরা বড় একটা অংশকে চাকরি ও ভালো জীবনযাপনের সুযোগ দিতে পারিনি। যারা অপতথ্য ছড়ায় তাদের বেশিরভাগেরই সোশ্যাল সিকিউরিটি, লাইবেলিটি, এমপ্লোয়েবিলিটি ও অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি নেই এবং ইকোনোমিক্যালি ভালনারেবল থাকায় কেবলমাত্র পলিটিক্যাল প্রভাব ও স্লোগানের মাধ্যমে বেনিফিট নিয়ে ডিসইনফরমেশন ও ফেইক নিউজ ছড়িয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা এবং সমাজে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ও সামাজিক গণ্ডিতে, নিজের একটা অবস্থান তৈরি করার কাজটি করে থাকে। অর্থাৎ এসব কাজের পেছনে দায়ী প্রধানত অর্থনীতি ও শিক্ষা। আমাদের দেশে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি ও শিক্ষাকে কখনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যার কারণে, ‘অপ্রয়োজনীয়’ একটি জনগোষ্ঠী আপনা-আপনিই তৈরি হয়ে গেছে। আর তারাই এসব কাজে জড়াচ্ছে। তাছাড়াও, আইনের প্রয়োগ না থাকা এই অবস্থাকে দিচ্ছে বেপরোয়া গতি।

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী আরও বলেন, বাংলাদেশে এথিক্স মেনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন লোকের সংখ্যা ২-৩ শতাংশের বেশি হবে বলে আমার মনে হয় না। ঠিক তেমনি, পিস জার্নালিজম আমাদের মূল ধারার সাংবাদিকতায় প্রায় অনুপস্থিত। এমন একটি সোসাইটিতে যখন কোটি কোটি মানুষকে অবাধ ইন্টারনেটের সুযোগ দেওয়া হয়, তখন বেপরোয়াত্ব ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বাড়ার বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনার সুযোগ কম। এক্ষেত্রে, চীনসহ অনেক দেশই রেস্ট্রিকটেড সিস্টেম চালু করেছে। এরকম সিস্টেমের মাধ্যমে অপতথ্য ছড়ানোর মহামারি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। কারণ, এ সিস্টেমে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে কে কী ক্রাইম করছে, তা নিরূপণ করা করা সম্ভব। আর সে অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে সন্তোষজনক সমাধান সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্রমেই তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন বাড়বে, সে প্রেক্ষিতে মানুষকে পর্যাপ্ত এক্সেস দিতে হবে, শিক্ষা দিতে হবে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমেই সমাজ এগিয়ে যাবে। তবে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা কখনো কখনো অপপ্রচারের অন্যতম কারণ হয়। এক্ষেত্রে আমাদের দেখতে হবে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে তথ্য-অপতথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদেরকে কতটুকু সচেতন করতে পেরেছি। আমার মনে হয়, এই সচেতনতাটা মানুষের মধ্যে নেই। প্রযুক্তির ব্যবহার ভালো-মন্দ দুইভাবেই করা যায়। এটি মানুষের বা নিজের কল্যাণে ব্যবহার করে না করে এখন যাচ্ছেতাই ভুয়া ফটোকার্ড ও ডিপফেইক ছবি-অডিও-ভিডিওর ছড়াছড়ি আমাদের মাঝে মহামারি আকার ধারণ করেছে। যার কারণে আমরা সবাই ভুগছি। 

তিনি আরও বলেন, সামাজিক মাধ্যমে মিস ইনফরমেশন ও ডিজইনফরমেশন ব্যাপকভাবে প্রচারের কারণে সেগুলো যখন এক পর্যায়ে যখন মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়, তখন মূল ধারার গণমাধ্যমও মানুষের কাছে আস্থা হারায়। তাদের মধ্যে এরকম ধারণাও জন্ম নিতে পারে যে, প্রবাহিত তথ্যের মাধ্যমগুলো হয়ত সব এরকমই। সুতরাং তথ্য-প্রযুক্তিকে মানুষের মাঝে যেমন সহজলভ্য করতে হবে, ঠিক তেমনই ব্যবহারকারীদের মাঝে সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ও লার্নিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। 

অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, যতই লার্নিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক না কেন, কিছু মানুষের কাজ সবসময়ই অপরাধমূলক হবেই। বিশেষ করে, দেশে মহামারি ও সংকটকালেই এ গ্রুপটির তৎপরতা বেড়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে ফিল্টারিং সিস্টেম চালু ও আইনের প্রয়োগ ঘটানোর পাশাপাশি, সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন অ্যান্ড মিডিয়া লিটারেসি টার্মটির চর্চা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে সব বিষয়ে ক্রিটিক্যালি বিবেচনার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সব জায়গায়, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়েও মিডিয়া লিটারেসির বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে আমরা কিছুটা হলেও এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।