Image description

কুমিল্লার মুরাদনগর আলিচর এলাকার মেয়ে সালমা বাস করেন মিরপুর ঝিলপাড় বস্তিতে। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম ‘সালমা’। এই নামেই তিনি পাসপোর্ট করেছেন। কিন্তু অনলাইন আবেদনে তার সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে তিনি পড়েছেন বিপাকে। সেখানে তার নিজের জন্মনিবন্ধন নম্বর দিতে হবে। কিন্তু তার এক শব্দের নাম দিয়ে জন্মনিবন্ধনও করা যাবে না। নামের সঙ্গে লাগবে দ্বিতীয় নাম ‘বেগম’ বা ‘আক্তার’ বা অন্য কিছু। নিজের পরিচয়পত্রে নাম ঠিক করাতে সালমাকে তার গ্রামের বাড়ি গিয়ে স্থানীয় অফিসে নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। সেখানেও পদে পদে হয়রানির ভয়। গার্মেন্টসকর্মী এই নারীর কাছে কাজ ফেলে এলাকায় গিয়ে এই কাজে সময় নষ্ট করা মানে ‘বিলাসিতা’। তাই নিজের জন্মনিবন্ধন আর করা হয়নি। ফলে সন্তানও বঞ্চিত নিবন্ধন থেকে। আর এটি ছাড়া নগরীর স্কুলগুলোতে সন্তানকে ভর্তি করানো যায় না। ভবিষ্যতেও বঞ্চিত হবে বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা থেকে।

 

গত রবিবার ঢাকার মিরপুরের ঝিলপাড়, ট-ব্লক, চলন্তিকা, আরামবাগ বস্তি এলাকা ঘুরে দেখা গেল এই সমস্যা প্রায় সবারই। সেখানকার হাজার হাজার শিশু স্কুলে যাওয়া থেকে বঞ্চিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বেসরকারি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা না গেলে এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। স্থানীয়রা বলেন, কাগজপত্রের জটিলতায় স্কুলে ভর্তি না হতে পেরে মোবাইল আসক্তি, বাল্যবিবাহসহ নানা রকম অপরাধে শিশু-কিশোরদের জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় এলাকাগুলোতে।

 

যা বলছে ভুক্তভোগীরা :মিরপুর মিল্কভিটাগলি সেকশন-৭ ,ওয়ার্ড-৬ নম্বর এলাকা দিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে নূসরাত বলেন, তার তিন সন্তানের বয়স যথাক্রমে পাঁচ, তিন ও  এক বছর। তাদের কারোই জন্মনিবন্ধন করা হয়নি। কারণ নূসরাতের নিজের জন্মনিবন্ধন নেই। আব্দুল্লাহ আল বাসিতের বয়স চার বছর। বাবার নাম আ. মান্নান, মায়ের নাম ময়না। তাদের নামের অসম্পূর্ণতার জন্য জন্মনিবন্ধন করা যায়নি। নিবন্ধন করাতে গেলে দালাল তাদের কাছে ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করে। এত টাকা দিয়ে নিবন্ধন করানো সম্ভব নয় বলে তারা জানান। মো. শামীম হোসেন, ফারজানা মিতুর চার বছরের সন্তান মিনহাজের টিকা দেওয়া সম্পূর্ণ হয়নি বলে জন্মনিবন্ধন করতে পারছেন না। ১০ বছরের ইয়াসিন জন্মনিবন্ধন নেই বলে স্কুলে যায় না।

বাল্যবিয়ে হয় বেশি: রোজিনা আক্তারের বয়স ১৯ বছর। তিন বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে তার। ১৬ বছরে বিয়ে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন। জোছনা নামের আরেক নারী জানান এলাকার বেশির ভাগ কিশোরীর তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। জন্মনিবন্ধন না থাকায় তাদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে না। বয়স কত সেটা কেউ ধরতে পারে না। ৬ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে জানা যায় ২৫ একর জমি নিয়ে গঠিত চারটি বস্তিতে ৫০ হাজারের অধিক মানুষের বাস। যেখানে ৮/১০ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। যাদের অধিকাংশের জন্মনিবন্ধন হয় না। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সচিব মো. আব্দুল সামাদ বলেন—‘যাদের বাবা নেই, মা নেই, পথশিশু; তাদেরও জন্মনিবন্ধন আমরা করছি। কিন্তু বাবা-মা আছে, তারা সচেতন নয় বলে নিজ এলাকায় গিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করছে না। তাদের শিশুদের কীভাবে জন্মনিবন্ধন করব। আমরা তো আর আইনের বাইরে যেতে পারি না।