গণভোটের সময় নিয়ে সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল চায় একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট। অন্যদিকে জামায়াত চাইছে জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোট। তাদের এই অবস্থানে নির্বাচন পেছানের ষড়যন্ত্র রয়েছে— এটা বরাবরই বলে আসছে বিএনপি। সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও জামায়াতের কার্যক্রমে নির্বাচন পেছানোর দুরভিসন্ধি দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট হবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, সেখানেই গণভোটের ব্যাপারে বার্তা রয়েছে। তবে দলগুলোর দাবির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে হবে। এই গণভোটে জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলোর ওপর বিভিন্ন দলের দেয়া নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) উল্লেখ থাকবে না। তবে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সনদ বাস্তবায়নে ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতার যে সুপারিশ করা হয়েছে, সেটি তুলে দেয়া হবে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, সংসদের উচ্চকক্ষ পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে গঠিত হবে। অর্থাৎ জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের যে দাবি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে সরকার। গত কয়েকদিনের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ভিত্তিতে সরকার এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উল্লিখিত সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে এখনই এসব সিদ্ধান্ত দলগুলোর ও চাপিয়ে দিতে চায় না সরকার। এজন্য দলগুলোকেই নিজেরা বসে মতৈক্যে এসে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে আহ্বান জানিয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলনে জানান, উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এ ব্যাপারে গণভোট নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এ ধরনের মতবিরোধ উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় গণভোটের সময়, বিষয়বস্তু এবং সনদে উল্লিখিত ভিন্নমতের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে সরকারকে প্রস্তাব দিতে হবে। সম্ভব হলে এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে সিদ্ধান্ত। তা না হলে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, সেখানেই গণভোটের ব্যাপারে বার্তা রয়েছে।
সরকার অনুরোধ করেছে এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে দলগুলোর সিদ্ধান্ত জানাতে। এ সময়ের মধ্যে না পারলে আরও দুই-তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তারা এ ধরনের বার্তা পেয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময় লাগবে। এরপরও তারা একমতে আসতে না পারলে সরকার আদেশ জারি করবে। এছাড়াও গণভোটসহ সনদ সংক্রান্ত অন্য সিদ্ধান্তগুলো জানাবে সরকার। ফলে এ সময়ের মধ্যে গণভোট করা অসম্ভব। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অসম্ভব নয়। এ কারণে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে করতে হবে গণভোট।
সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ, বিএনপির অন্যতম দাবি ছিল জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট। আবার জামায়াতে ইসলামীর দাবি পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন। এটিও মানা হচ্ছে।
এছাড়া সনদ বাস্তবায়ন সুপারিশে কিছু বিষয়ের সঙ্গে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন। যেমন নির্বাচিত সংসদ (সংবিধান সংস্কার পরিষদ) ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে জুলাই আদেশের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে তা প্রতিস্থাপিত হবে। সরকার এই বাধ্যবাধকতা রাখতে চাচ্ছে না। এটি বিএনপিরও দাবি। অন্যদিকে সনদের যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট আছে, গণভোটে সেগুলো বাদ দেয়া হবে। এটি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি। নির্বাচনের পর যে দল ক্ষমতায় যাবে, তারা গণভোটে পাস হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে, না করলে জনগণ তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
শীর্ষনিউজ