Image description

ময়মনসিংহের হাসান (ছদ্মনাম) গত বছরের ১০ আগস্ট ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যান। এজেন্সির সঙ্গে হাসানের কথা হয়েছিল ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার। কিন্তু রাশিয়া যাওয়ার পর পরিবার জানতে পারে তিনি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে গেছেন। হাসান রাশিয়া থেকে অ্যাপের মাধ্যমে গোপনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার কথা জানান। তার পরিবার এখন আতঙ্কে দিন পার করছে। হাসানের প্রাণ যাওয়ার শঙ্কা থাকায় তাকে ফেরত পেতে তার বড় ভাই চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাসানের মতো অনেকের পরিবার তাদের প্রিয়জনকে ফিরে পেতে সাহায্য কামনা করেছে। এখন পর্যন্ত তারা ১০ জনের বিষয়ে জানতে পেরেছে। তবে এই সংখ্যা শতাধিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অনেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন না। কোনোভাবেই খোঁজ মিলছে না অনেক বাংলাদেশির। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা কিংবা নিখোঁজের প্রকৃত সংখ্যা এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। 

বৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধে

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে কয়েক লাখ বাংলাদেশি বিদেশ যান। রাশিয়া, এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও কাজের নিয়োগপত্র মিলছে। তবে ইউক্রেনে কাজের অনুমতি সরকার দিচ্ছে না। ইউক্রেন থেকে কাজের জন্য লোক নিয়োগের আগ্রহ দেখালেও বাংলাদেশ তাতে সাড়া দেয়নি। ইউক্রেনের দায়িত্বে থাকা পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি কিছু বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি ঢাকার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) যোগাযোগ করলেও দূতাবাস তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিমাসে রাশিয়া এবং ইউক্রেনে কাজের উদ্দেশ্যে বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়। রাশিয়ার ক্ষেত্রে মাসে শতাধিক এবং ইউক্রেনের ক্ষেত্রে ২-৩টি ক্লিয়ারেন্স মিলছে।    

হাসানের মতো একই ট্রাভেল এজেন্সি ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড কোঅপারেটিভ রিক্রুটমেন্টের মাধ্যমে কবির (ছদ্মনাম) বৈধভাবে কাজের উদ্দেশ্যে রাশিয়া গেছেন। তাকেও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ দেওয়ার কথা বলে সেখানে পাঠানো হয়। কবিরও রাশিয়া গিয়ে এখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। তাকে ফেরত নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে তার পরিবার। তবে তারা দুজনই এখনও রাশিয়ায় অবস্থান করছেন।

তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এত মাস অপেক্ষা করে এখন ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। হাসানের বড় ভাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘সে কল দেয়, আমাদের খোঁজ খবর নেয়। আমরা অনেক জায়গায় তাকে ফেরত আনার জন্য ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি তাকে ফেরত পাওয়ার। আমাদের ধারণা, সে আর ফিরে আসতে পারবে না। প্রতিদিন এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আমরা দিন পার করছি।’’

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশিদের নিয়ে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়োজিত করা হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের পরিবারগুলো কখনও কল্পনাও করেনি যে বৈধ চাকরির জন্য একজন ছেলের বিদেশযাত্রা শেষ হবে—তার নাম যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত করে। বিচ্ছিন্ন আকারে যে ঘটনা শুরু হয়েছিল, তা এখন একটি কাঠামোগত প্যাটার্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ভুক্তভোগীরা, যাদের অনেকে মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, তারা তেল, নির্মাণ এবং লজিস্টিকসের মতো খাতে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিতে বৈধ ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে রাশিয়া গিয়েছিলেন। পাচারকারী নেটওয়ার্ক স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে এবং কাগজপত্র ব্যবহার করে এই কাজগুলো করছে। তদন্ত  চললেও এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলো সরকারি কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মানবিক অংশীদারদের কাছ থেকে জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি রাখে।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘গত বছরের শেষের দিক থেকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম একই ধরনের পাচারের বর্ণনাসহ পরিবারগুলোর কাছ থেকে বেশ কিছু আবেদন পেয়েছে। বৈধ ভিসা, বৈধ ভ্রমণ এবং বেআইনি জবরদস্তি—এগুলো তাদের ভাষ্যে সবার ক্ষেত্রে একই। অন্তত ১০টি পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিখোঁজ আত্মীয়দের কথা জানিয়েছে, যারা রাশিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই নিখোঁজ হয়েছিলেন।’’

এখন পর্যন্ত কয়েকটি মৃত্যু খবরও এসেছে

সামাজিক মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশিদের যোগদান নিয়ে নানারকম তথ্য পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার পথও শিখিয়ে থাকেন। এমন পথ গ্রহণ করে অনেকে জড়িয়ে পড়েছেন যুদ্ধে। তাদের মধ্যে কয়েকজন মৃত্যুবরণও করেছেন। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চুক্তিভিত্তিক সদস্য হিসেবে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে মিসাইলের আঘাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার যুবক ইয়াসিন মিয়া শেখ (২২) মারা গেছেন। গত এপ্রিলে তার মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।

রাশিয়ায় গিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন রাজবাড়ীর নজরুল ইসলাম (৪৭)। দীর্ঘ ৭ মাস নিখোঁজ থাকার পর গত ৮ অক্টোবর তার মৃত্যুর খবর জানতে পারে পরিবার।

রুশ বাহিনীর হয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫) প্রাণ হারিয়েছেন। রাশিয়া গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির নামে দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ওই যুবক। এই বছরের ১৯ এপ্রিল দুপুরে এক সহযোদ্ধার ফোনে নিহত হওয়ার খবর পৌঁছালে তার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

মৃতদের পরিবারের সদস্যরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, তারা সবাই উন্নত জীবনের আশায় চাকরির প্রলোভনে পড়ে এই পথে পা বাড়িয়েছেন। তাদের সবাইকে রাশিয়ায় কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাদের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অনেকের

বাগেরহাটের অয়ন মণ্ডল বৈধ ভিসা নিয়ে রাশিয়া গিয়েছেন। তার পরিবার জানায়, তিনি সর্বশেষ জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় সীমান্তের দিকে সরে যাওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে তার লাশ উদ্ধার করা হয়নি।

কুমিল্লার অমিত বড়ুয়াকে রাশিয়া পৌঁছানোর পর প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি দলের সঙ্গে সম্মুখভাগে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ নেই কয়েক মাস। রাশিয়ায় সিনোপেক নামে একটি কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে যোগ দেন ২০২৪ সালের অক্টোবরে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার দেড় মাসের মাথায় বাবা হারান তিনি। ভিডিও কলে অমিত স্বজনদের জানাতেন, কয়েকজন রাশিয়ান তাকে ভাষা শেখাচ্ছেন, কাজও চলছে ঠিকঠাক। অমিতের সঙ্গে তার স্ত্রীর শেষবার কথা হয় চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল। কিন্তু এর মাত্র পাঁচদিন পর ৪ মে এক বাংলাদেশি সহকর্মী ফোন করে অমিতের বড় ভাই সুমিত বড়ুয়াকে জানান, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় অমিত নিহত হয়েছেন। তারপর থেকে তার বিষয়ে আর কোনও খোঁজ পায়নি পরিবার।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একইভাবে জড়িয়ে পড়াদের আরও আটটি পরিবার ব্র্যাকের শরণাপন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ট্রানজিট রুট দিয়ে রাশিয়া যান। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেদেশে যাওয়ার পর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল এবং হুমকি দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হতে কাগজে সই নেওয়া হয়।

পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক একজনকে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করে কাজের প্রলোভনে রাশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জোরপূর্বক একটি কাগজে সই নেওয়া হয়। পরিবারের দাবি, কাগজটি লেখা রুশ ভাষায় হওয়ায় তারা কেউ বুঝেননি সই কোথায় করছেন। সই করতে যারা অস্বীকৃতি জানাতো, তাদের করা হতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

সামাজিক মাধ্যমে যুদ্ধে যাওয়ার প্রচারণা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অনেকেই ফেসবুকে প্রায় প্রতিদিন ভিডিও দিচ্ছেন। সেই ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে। সেখানে দেখানো হচ্ছে—যুদ্ধের প্রস্তুতি, কীভাবে কখন কোথায় যাচ্ছেন, ভূপাতিত ড্রোন আর ট্যাংক।

এমন বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পোশাক পরে যুদ্ধের বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। এসব ভিডিওতে তাদের সঙ্গে রাশিয়ান সৈন্যদেরও দেখা গেছে। কখনও স্নাইপার বন্দুক হাতে নিয়েও তারা ভিডিও করে জানান দিচ্ছেন। তারা বলছেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, এখন রাশিয়ার আর্মিতে যোগ দিয়েছি। তাদের মুখে রাশিয়ার বিপ্লবের স্লোগানও শোনা যায়। কেউ কেউ ভিডিওতে তাদের কমান্ডারের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেন। আবার একেক সময় একেক ধরনের অস্ত্রের সঙ্গেও পরিচয় করান তারা।

এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, এদের কেউ কেউ মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে কাজ করছেন।

ইউক্রেনের যোদ্ধা হয়েও অংশ নেন অনেকে

শুধু রাশিয়া নয়, ইউক্রেনের যোদ্ধা হয়েও অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। সেখান থেকে প্রাপ্ত কিছু ভিডিও বার্তায় দেখা গেছে, অনেকেই এই কাজে যুক্ত হতে বারণ করেন। তারা বলেন, যারা ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে যাবেন, আপনারা মরার জন্য এখানে আসবেন না। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ—কেউ যেন ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে না যান। সেখানে গেলে মরণ কনফার্ম। আমাদের দেশের অনেক ভাইয়েরা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন। আমরা চাই না ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশি ভাইয়েরা আমাদের সামনে পড়ুক। কারণ, মারতে মায়া লাগবে দেশি ভাই হিসেবে। চিন্তাভাবনা করে এখানে আসবেন। 

ব্র্যাক কর্মকর্তা শরিফুল হাসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় মানবপাচার হয় কয়েক ধাপে। প্রথমে স্থানীয় দালাল বা অন্য কোনও মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোক বাছাই করে। চাকরির ক্ষেত্র হিসেবে কখনও বড় নির্মাণ কোম্পানির নাম বলা হয়। পরে ভিসা ও ট্রানজিট সম্পর্কিত কাগজপত্র তৈরি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর রাশিয়া পৌঁছানোর পর দু-এক মাসের মধ্যেই যুদ্ধে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে চক্রটি।’’

তিনি বলেন, ‘‘এ সমস্যা মোকাবিলায় প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রশাসনকে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করতে হবে। বিগত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যারা আটক রয়েছেন, বা তাদের পরিবারের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে কর্মীদের ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসব প্রক্রিয়ায় যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’’

তদন্ত করছে সিআইডি

রাশিয়া ইউক্রেনে মানবপাচার নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গত জুনে রাশিয়ায় কাজের প্রলোভন দেখিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করে সংস্থাটি। সিআইডির তদন্ত অনুযায়ী গ্রেফতার মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন মানবপাচার ‘চক্রের হোতা’। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে তারা রাশিয়ায় নিয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্তত ১১ জনকে যুদ্ধে যেতে ‘বাধ্য’ করেছে।

তদন্তে জানা গেছে, রাশিয়ায় অনেককেই বৈধভাবে সরকারি ক্লিয়ারেন্স (বিএমইটি কার্ড) নিয়েই পাঠানো হয়েছে। আর কিছু পাঠানো হয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসায়। ট্যুরিস্ট ভিসায় যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদেরকে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

সিআইডি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘‘চক্রটির সদস্যরা মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার কিংবা বাবুর্চির কাজের কথা বলে প্রথমে ১০ জনকে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে ওমরাহ করার পর রাশিয়ায় ‘সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন’। সুলতান তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সৈন্যদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয় যুদ্ধে। আর যুদ্ধে যেতে অনীহা প্রকাশ করলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।’’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলছে

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশে যায়। কেউ যদি কোনও দেশে যায়, আর সে যদি লোভে পড়ে বা অন্য কোনও কারণে কোনও দেশে গিয়ে যুদ্ধে জড়ায়, তা ঠেকানো আমাদের পক্ষে কঠিন। আমরা শুধু দেখবো, জোর করে কাউকে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে কিনা। তবে আমরা সেরকম কিছু পাইনি এখনও। কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তার লাভের জন্য যুদ্ধে  চলে যায়, আমরা অবশ্যই সেটা নিরুৎসাহিত করবো।’’