Image description

বান্দরবানের বাইশারী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আয়ুব আলী বাবুল। পেশায় পোলট্রি খামারি। একই গ্রামের নুরুল বশর, ফরিদুল আলম পেশায় দিনমজুর। লেনদেনের জন্য কখনো ব্যাংকের বারান্দায়ও যেতে হয়নি তাদের। অথচ তিন জনের নামেই ব্যাংকে রয়েছে ২৭ কোটি টাকার ঋণ! ঋণের বকেয়া পরিশোধের জন্য তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে নোটিস। পরিশোধের তাগাদা পেয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন তারা। কিন্তু বাস্তবে ঋণগ্রহীতা নন বলে জানান তারা ।

২০২২ সালে ঋণ গ্রহণ দেখানো হলেও বিষয়টি প্রকাশ পায় ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর। ওইদিন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবিএল) চট্টগ্রামের চকবাজার শাখা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে এমন দাবি করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আয়ুব আলীর কাছে টাকা পরিশোধের জন্য নোটিস পাঠান। নোটিসে তাকে ৬ কোটি ১২ লাখ বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে বলা হয়।

ওই ব্যাংকের একই শাখা থেকে বাইশারী হলুদিশিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল বশরকে ১০ কোটি ৬ লাখ এবং একই গ্রামের ফরিদুল আলমকে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য ডাকযোগে বন্দর শাখা থেকে নোটিস পাঠানো হয়।

ধারণা করা হচ্ছেÑ দালালচক্র ও অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গ্রামের অসহায় মানুষের নামে ভুয়া ব্যাংক হিসাব ও ঋণ হিসাব খুলে তিন জনের নামে ২৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজেরা বাঁচতে ঋণের দায়ভার গ্রামের অসহায় মানুষের ওপর চাপানো হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি চট্টগ্রামের চকবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান চৌধুরী এবং বন্দর শাখার ব্যবস্থাপক মো. আরিফ হোসেন কীভাবে ভুয়া ঋণ নথি তৈরি করেছে তা তদন্ত করার জন্য দুদকে একটি আবেদন করেছেন।

ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, আমাদের নামে ভুয়া ঋণ নিতে এনআইডি কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বানিয়ে এমন জালিয়াতি করেছে চক্রটি। আইয়ুব আলী জানান, ২০২২ সালে কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম তাদের একটি সিকিউরিটি গার্ডে চাকরি দেওয়ার নামে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যায়। ইন্টারভিউ দিতে হবে না মর্মে সেখানে এনআইডিসহ কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। তাদের ধারণা ওই আবুল কালাম তাদের কাগজপত্র পটিয়ার একটি মাফিয়া গ্রুপের মাধ্যমে ব্যাংকে দিয়ে ঋণ নিতে সহায়তা করেছে।

ভুক্তভোগী আইয়ুব আলী জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে এই অপকর্ম করেছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিষয়টি বর্তমানে অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। সম্প্রতি ইউসিবিএল ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা এসে তাদের কাছ থেকে ভিডিও বার্তা নেওয়ার প্রস্তাব দেন কিন্তু ভুক্তভোগীরা তাতে অস্বীকৃতি জানান।