অর্থনৈতিক মন্দা, করোনা মহামারি ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে এই মূল্যবান পদার্থের দাম প্রায় দিনই ওঠানামা করছে। ফলে অস্থিতিশীল বাজার নিয়েও নানা রটনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ডলারের পতন, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, ব্যবসায়িক মন্দা সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের নজর স্বর্ণের দিকে। আর তাতেই ফুলে-ফেঁপে উঠেছে স্বর্ণের বাজার। ২০২৫ সালজুড়ে বেড়েই চলছে স্বর্ণের দাম। বিখ্যাত আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান মর্গ্যান স্ট্যানলির মতে, আসছে বছরেও একই ধারা অব্যাহত থাকবে।
মর্গ্যান স্ট্যানলির বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী ২০২৬ সালের মাঝামাঝি প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়ে ৪ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আর্থিক এই সংস্থাটি বলেছে, অনিশ্চিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বর্ণের দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী।
মর্গ্যান স্ট্যানলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আরএসআই (পণ্যের আপেক্ষিক ক্ষমতা) সূচকে স্বর্ণ ‘অতিরিক্ত কেনা হয়েছে’ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তবে দাম কিছুটা কমার কারণে এটা স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।
মর্গ্যান স্ট্যানলির পূর্বাভাস অনুযায়ী, সুদের হার কমতে থাকলে স্বর্ণভিত্তিক ইটিএফে বিনিয়োগ বাড়বে, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও তুলনামূলক ধীর গতিতে হলেও স্বর্ণ কেনা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি গহনার চাহিদাও স্থিতিশীল থাকবে।
তবে ব্যাংকটি সতর্ক করে বলেছে, স্বর্ণের বাজারে এখনো কিছু নেতিবাচক ঝুঁকি রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো- দামের অস্থিরতা, যা বিনিয়োগকারীদের অন্য সম্পদে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকতে প্ররোচিত করতে পারে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যদি স্বর্ণের মজুত কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে দাম কমতে পারে।
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। এই সময়ে একাধিকবার রেকর্ড উচ্চতা ছুঁয়েছে স্বর্ণের বাজার। চলতি বছরের ২০ অক্টোবর সর্বশেষ প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার ৩৮১ ডলার ছাড়িয়েছিল। যদিও এরপর তা ৮ শতাংশের বেশি কমেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মূলত ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, সুদের হার কমানোর শঙ্কা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয় এবং স্বর্ণভিত্তিক ইটিএফে বিপুল বিনিয়োগের কারণে স্বর্ণের দাম পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৯ দশমিক ২৪ ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসজুড়ে দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণ ফিউচার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ২০ দশমিক ৮০ ডলারে লেনদেন হয়।
ডলার সূচক তিন মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকায় ডলারে নির্ধারিত স্বর্ণ অন্য মুদ্রাধারীদের জন্য আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
অ্যাকটিভট্রেডসের বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভানজেলিস্তা বলেন, ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের কড়া মন্তব্যের পর ডলার শক্তিশালী হয়েছে, যার ফলে স্বর্ণের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।
এদিকে, দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির দাম ২ লাখ ৯৬ টাকা, ২১ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির দাম ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির দাম ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৬ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের প্রতি ভরির দাম ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৪ টাকা।