Image description
 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার আসামি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করার পরপরই একই দিনে মশিউর এবং আলেপের গুমের স্বাক্ষী এবং ভিকটিম আনিসুর রহমানকেও বান্দরবানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী ও পর্যবেক্ষকদের মতে, ঘটনাটি নিছক কাকতালীয় নয়। বরং এটি গুমের অভিযোগকারীদের উদ্দেশে একটি হুমকির বার্তা বহন করছে।

 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে দায়িত্বরত অবস্থায় সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মশিউর রহমানকে হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা অনুযায়ী মশিউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাকে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে।'

প্রসিকিউশন জানায়, মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা গুম সংক্রান্ত একটি মামলা রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে দ্রুত আদালতে হাজির করা হবে।

 

এদিকে মশিউর রহমানকে আটকের পর ঘণ্টাও না পেরোতেই বান্দরবান আদালত চত্বর থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় আনিসুর রহমানকে। বান্দরবান সদর থানার ২০২৩ সালের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মাসুদ পারভেজ। ওসি জানান, বান্দরবান সদর থানার ২৮/২০২৩ নং মামলার এজাহারভুক্ত আসামী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে যে মামলায় আনিসুর রহমানকে আটক করা হয়েছে ওই মামলার এজাহারে আনিসুরের নাম, পিতার নাম বা ঠিকানাসহ প্রাসঙ্গিক পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল না বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, যে মামলায় বান্দরবানে আনিসুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটির উল্লেখিত তারিখ বা সময়ে আনিসুর গুম অবস্থায় ছিলেন। এ ছাড়া মামলাটির মোট ২৯ জন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে কেবল ১০ জনের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ থাকলেও বাকি ১৯ জনের কারোরই নাম ব্যতীত অন্য কোনো তথ্য ছিল না। মামলাটির ২৪ নং আসামির নাম লেখা ছিল

 

"আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ (৩২)"। এই বাইরে পিতার নাম কিংবা ঠিকানা উল্লেখ ছিল না এজাহারে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সিআইডি কার্যালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত নেওয়া মশিউর রহমান ছিলেন র‌্যাব-১১ এ কর্মরত প্রাক্তন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। আলেপ উদ্দীনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে একাধিক গুম ও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিবেচনায় আছে। গত ১২ নভেম্বর বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় আলেপকেও ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সম্পর্কিত হত্যা মামলার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে গুম সংক্রান্ত অভিযোগও আনা হয়েছে।

 

প্রসিকিউশন বলছে, আলেপের গুম ও খুনের সহযোগী হিসেবে মশিউরের ভূমিকার কারণে তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

অথচ গতকাল বান্দরবানে গ্রেফতার গুমের ভিকটিম আনিসুর রহমানের পরিবারের দাবি, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে র‌্যাব-১ এর গোয়েন্দা শাখায় তখনকার এএসপি আলেপ উদ্দীনের নেতৃত্বে তিনি গুম হন। প্রায় ১০ মাস নিখোঁজ থাকার পর ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাকে মুন্সিগঞ্জে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে ‘জঙ্গি’হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। পরে দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ছয়টি মামলায় তার নাম যুক্ত হয়। এসব মামলায় তিনি পরে জামিনে মুক্তি পান।

তার আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা আরও জানায়, আনিসুর গুমের বিষয়ে গুম কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যায়বিচারের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।