Image description
বাংলাদেশ-ভারত যাত্রীবহন । ।তৃতীয়বারের মতো চিঠি দিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল ১৫ মাস ধরে বন্ধ। কবে নাগাদ চালু হবে সেটি অনিশ্চিত। এ নিয়ে বলতে পারছেন না রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। বাংলাদেশ রেলওয়ে এ প্রসঙ্গে ভারতীয় রেলওয়েকে দুই দফা চিঠি দিয়েছে। জানিয়েছে, বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তুত, ভারতের সম্মতি পাওয়া গেলে যে কোনো সময় ট্রেন চালাতে পারবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলত। এগুলো হলো-মৈত্রী এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস ও মিতালী এক্সপ্রেস। এসব ট্রেন থেকে বছরে প্রায় একশ কোটি টাকা আয় করত বাংলাদেশ। ট্রেন তিনটি ফের চালু করার জন্য আগামী সপ্তাহে ভারতীয় রেলওয়েকে আবারও চিঠি লিখবে বাংলাদেশ। সূত্রমতে, গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরু হয়। ওই সময় নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় দুদেশের মধ্যে চলাচলকারী তিন যাত্রীবাহী ট্রেন। ওই বছরের ১৭ জুলাই মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রাজধানীর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি পরদিন শতভাগ যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থান পরিস্থিতিতে তা ছেড়ে যায়নি। একইভাবে নিরাপত্তার অভাবে ঢাকা-কলকাতা রুটে চলা মৈত্রী এক্সপ্রেস ও খুলনা-কলকাতা রুটে চলা বন্ধন এক্সপ্রেস ১৯ জুলাই থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন তিনটির টিকিট প্রায় ২০ দিন আগ থেকেই যাত্রীরা কিনে থাকেন। পরে এসব যাত্রীকে অর্থ ফেরত দেওয়া হয়।

এদিকে দুদেশের মধ্যে চলাচলরত মালবাহী ট্রেনের আয়ও হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বেনাপোল, দর্শনা ও রোহনপুর রুটে ট্রেন চলাচল করছে। শুধু আমদানি পণ্য আসছে এসব রুট দিয়ে। দুই বছর আগেও বাংলাদেশ থেকে রেলপথে ভারতে রপ্তানি করা হতো সার, চিটাগুড় ও কসমেটিক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মালবাহী ট্রেনে আমদানি পণ্য এনে প্রায় পৌনে দুইশ কোটি টাকা আয় করা হয়। বর্তমানে তা ৫০-৬০ কোটিতে নেমে এসেছে।

রেলওয়ে অপারেশন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বন্ধ থাকা তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন কী করে চালানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ থেকে একজন অতিরিক্ত সচিব, রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ (অপারেশন) ৪ কর্মকর্তা ওই বৈঠকে অংশ নেন। ওই বৈঠকে ভারতীয় রেল জানিয়ে দেয়, নিরাপত্তার কারণে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও ভারতীয় রেলওয়ের মধ্যে প্রতিবছর আইজিআরএম বোর্ড বৈঠক হয়। ৩৮তম সভা ২০২৬ সালের মার্চে ঢাকায় হওয়ার কথা। ওই বৈঠক ঢাকায় হবে কি না-তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসংক্রান্ত সভায় (৬ অক্টোবর) ভারতকে তৃতীয়বারের মতো চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

রেলওয়ে পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আগামী সপ্তাহের শুরুতে রেলপথ বিভাগ থেকে ওই চিঠি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে সেই চিঠি ভারতে পাঠানো হবে। বর্তমানে ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে ভিসা প্রদান সীমিত করেছে। মেডিকেল, কূটনৈতিক, সরকারি সফর, ব্যবসা ও স্টুডেন্ট ভিসা-সবই সীমিত পরিসরে দেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। যারা ভিসা পাচ্ছেন, তাদের অনেকেই ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আন্তঃদেশীয় ট্রেন বন্ধ থাকায় ভ্রমণকারীদের বিকল্প পথে যেতে হচ্ছে।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. নাজমুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দুদেশের মধ্যে ট্রেন পরিচালনায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ভারতের পক্ষ থেকে আমরা এখনো সাড়া পাচ্ছি না। তারা নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার সামনে আনছে। আমরা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই আবার ভারতকে চিঠি দেব। এর আগেও দুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুদেশের মধ্যে ট্রেন পরিচালনা করলে প্রায় ৮০ শতাংশ আয় বাংলাদেশ রেলওয়ের থাকে। মৈত্রী এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে, ওটাও চিঠিতে জানানো হবে। রাজশাহী-কলকাতার মধ্যে ট্রেন পরিচালনাসহ বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের এন্ড টু এন্ড কাস্টম ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম খুলনা স্টেশনে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেলপথে আলাদা ভিসা প্রদানের বিষয়েও চিঠিতে উল্লেখ করা হবে।

নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, দুদেশের মধ্যে আরও বেশি পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুদেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দর্শনা-গেদে, পেট্রাপোল-বেনাপোল এবং রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ চেকপোস্ট দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পণ্যবাহী ট্রেন চালানোর বিষয়েও চিঠিতে উল্লেখ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বুধবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আয় বৃদ্ধি এবং চাহিদার ভিত্তিতে ট্রেন পরিচালনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে-দুদেশের মধ্যে ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে কী কী করা যায়। রেলের জন্য যা কল্যাণকর, তা করা হবে।