Image description

পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় সরকারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের এমপি হতে প্রচারচালানোর কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সেখানকার কয়েকজন কাউন্সিলর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, টাওয়ার হ্যামলেটসের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর নিশ্চিত করেছেন, তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন চাইবেন।

তাদের একজন সাবিনা খান, যিনি বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নামছেন। সাবিনা ২০২২ সালে মাইল এন্ডে লেবার দলের হয়ে জয় পান। তবে গত বছর সেখানকার ক্ষমতাসীন অ্যাস্পায়ার পার্টিতে যোগ দেন।

কাউন্সিলের নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের টাউন হলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে অর্ধেকেরও কম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশে প্রচার চালাচ্ছেন।

মাইল এন্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ হুসেইন ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমি মনে করি না তিনি ঠিক করছেন। বেশিরভাগ সময় তিনি বাংলাদেশে থাকছেন। তার পদত্যাগ করা উাচিত। আমরা তাকে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নির্বাচিত করেছি, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নয়।'

আরেক বাসিন্দা জাকির হুসেইন বলেন, 'আমি আমার কাউন্সিলরকে নিয়ে খুশি নই। এমন প্রচুর লোক আছেন, যারা অখুশি। পাঁচ-ছয় মাস তাকে আমরা দেখেছি। আমাদের কোনো সমস্যার ব্যাপারে তিনি কোনো জবাব দেন না।'

বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য ল্যান্সবেরি ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর ওহিদ আহমেদও প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নারী শিক্ষা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাটে দুর্ভোগের চিত্রও তুলে ধরেছেন।

ওহিদ আহমেদ ২০০২ সালে লেবার পার্টির হয়ে প্রথমবার কাউন্সিলর হন। পরে লুৎফুর রহমানের দলে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ফার্স্টে জয় পান। পরবর্তীতে ২০২২ সালে অ্যাস্পায়ার পার্টির হয়ে নির্বাচিত হন। গত বছর ওহিদ আহমেদ দল ছেড়ে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে না লড়ার কথা বলেছেন তিনি।

টাওয়ার হ্যামলেটসের আরও একজন কাউন্সিলর বাংলাদেশের নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড। ২০২৪ সালের অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রথম সংসদ নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে। পূর্ব লন্ডনের অফিসে বসে বাংলাদেশের এ নির্বাচনে লড়ার অভিপ্রায় এবং প্রচার চালানোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলছে সেখানকার স্থানীয় সরকার।

‘হাউজিং, কমিউনিটিস ও লোকাল গভর্নমেন্ট’ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই ধরনের আচরণ ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। ব্রিটিশ সরকার চলতি বছরের শুরুতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্বচ্ছতার অভাব এবং ‘বিষাক্ত’ সংস্কৃতির কারণে সেখানে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বসায়।

২০২৪ সালের একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে দেখা যায়, টাউন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার কারণে ‘সত্যিকারের উন্নয়ন সংস্কৃতিতে’ সম্পৃক্ত হতে বাধাগ্রস্ত হন কাউন্সিলররা। এ পরিস্থিতিতে সংস্থার শীর্ষ স্তরে ঘন ঘন চাকরি ছাড়ার ঘটনা ঘটছে।

উপসংহারে বলা হয় স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভেতরের বলয়ের প্রভাব রয়েছে। আর সেই বলয় তৈরি হয়েছে বিতর্কিত মেয়র লুৎফুর রহমানকে ঘিরে, যিনি অ্যাস্পায়ার পাটির নেতা।

এ বিষয়ে অ্যাস্পায়ার পার্টির একজন মুখপাত্র ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশে 'এমপি নির্বাচিত হলে সাবিনা খান কাউন্সিলরের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। আগামী বছরের মে মাসে টাউন হলে স্থানীয় নির্বাচন হবে।'

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেন, কেবল অন্য কোনো দেশে নির্বাচনে দাঁড়ানো বা নির্বাচিত পদে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যের আইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করে না। তবে অন্য দেশে এমন আইন থাকতে পারে, যেখানে দুই দেশের দায়িত্ব সামলানোর সুযোগ নেই।