বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও রিমান্ডের ঘটনাকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (এএফএডি)। সংগঠনটি বলেছে, এটি বাংলাদেশের মানবাধিকার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার পথে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে সেনাবাহিনীর ১৫ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ৫ জন জেনারেল। একই সঙ্গে আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জনসমন জারি করেছে। বর্তমানে তিনি ভারতের নির্বাসনে আছেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা একসময় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এ দায়িত্বে ছিলেন। ২০২১ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে ২০২৫ সালের জুনে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপও র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করে।
এএফএডি মনে করছে, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের গুম ও নিখোঁজের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সূচনা। সংগঠনটি বলেছে, ‘এটি সত্য ও জবাবদিহির পথে বাংলাদেশের সাহসী অগ্রগতি, যা ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য আশার আলো।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্কও ১৫ অক্টোবর ২০২৫ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই আদালত প্রক্রিয়া জবাবদিহিতার পথে একটি বড় পদক্ষেপ এবং এটি ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।’
জাতিসংঘের হিসাবে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সরকারের পতনের সময় দমন-পীড়নে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়। ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৯০০টি।
এএফএডি জানায়, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের আগস্টে জাতিসংঘের ‘গুম থেকে সুরক্ষা কনভেনশন’-এ এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ‘নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকল’-এ যোগ দিয়েছে—যা মানবাধিকার রক্ষায় দেশের প্রতিশ্রুতি আরও দৃঢ় করেছে।
সংগঠনটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ট্রাইব্যুনালের প্রশংসা জানিয়ে বলেছে, ‘গুম ও নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলোর জন্য এটি ন্যায়বিচারের পথে এক নতুন সূচনা।’ পাশাপাশি তারা আহ্বান জানিয়েছে, বিচারপ্রক্রিয়ায় যেন ভুক্তভোগী পরিবারের অংশগ্রহণ ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
এশিয়ার মানবাধিকার সংগঠনগুলোর এই আঞ্চলিক জোটটি অন্যান্য দেশকেও আহ্বান জানিয়েছে—গুমকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মানসিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য।
এএফএডি মনে করছে, বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ গোটা এশিয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। সংগঠনটি বলেছে, ‘বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে- রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সৎ ও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে, তবে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এখন সময় এসেছে অন্য দেশগুলোরও এই পথে হাঁটার।’