Image description
 

টাইফয়েড হলো এক ধরনের জ্বর, যা দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হতে পারে। যেমন- সালমোনেলো টাইফি এবং সালমোনেলো প্যারাটাইফি। যে কোনো একটা দিয়ে আক্রান্ত হলে জীবাণুর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়, যা দুই ধরনের জীবাণু সংক্রমণ প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। যেমন- সালমোনেলো টাইফি এবং সালমোনেলো প্যারাটাইফি। 

 

সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে যে জ্বর হয় তাকেই টাইফয়েড জ্বর বলা হয়। আর সালমোনেলা প্যারাটাইফি জীবাণুর কারণে জ্বর হলে তাকে প্যারা-টাইফয়েড জ্বর বলা হয়।

টাইফয়েডের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে দুষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে। যদি কোনো খাবার ও পানির মধ্যে টাইফয়েডের জীবাণু থাকে, তাহলে সেই খাবার খেলে ও পানি পান করলে টাইফয়েডের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। টাইফয়েড জ্বর নানা কারণে বিপজ্জনক।

টাইফয়েড জ্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি  হতে পারে। যেমন- মস্তিস্কে প্রদাহ, হেপাটাইটিস, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি। 

টাইফয়েড হলে অন্ত্রে ঘা বা ইনফেকশন হয় যার ফলে ধীরে ধীরে নাড়িটা ফুটো পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে, যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয়ে থাকে। তখন তাৎক্ষণিকভাবে সার্জারির প্রয়োজন হতে যেতে পারে।

 

অন্যদিকে লিভারের প্রদাহ ছড়িয়ে যেতে পারে, তখন লিভারের এনজাইম বেড়ে গিয়ে হেপাটাইটিস হয়ে যায়।

টাইফয়েড জ্বর শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে। চিকিৎসা যদি ঠিকমতো সময়ে না করা হয় এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করলে রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়, যা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

টাইফয়েড টিকার কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কিনা?

কোনো একটা ভ্যাকসিন যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা  (WHO) অ্যাপ্রুভ করে তখন বিভিন্ন লেভেলে এটা নিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং বিভিন্ন ফেজে প্রয়োগ করে দেখা হয়, যেমন- প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর, তৃতীয় স্তরে। যখন দেখা যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একদম নাই বললেই চলে, তখনই সেটি ক্লিনিক্যাল  ট্রায়ালে যায়। ক্লিনিক্যাল  ট্রায়ালে যখন দেখা যায় মানুষের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হচ্ছে না, তখন জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাও অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে।

যে কোনো ওষুধে ব্যক্তি বিশেষে কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন- কারো এলার্জি হতে পারে বা ভ্যাকসিনের স্থানে ব্যথা বা লাল হয়ে যাওয়া বা জ্বর আসতে পারে।  সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খেলে ভালো হয়ে যায়।

টাইফয়েড টিকায় শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি?

দেশে প্রথমবারের মতো শিশুদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে টাইফয়েডের টিকা। এর আগে পাকিস্তান ও নেপালে শিশুদেরকে এই টিকা দেওয়া হয়। নেপালে এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে ২০ হাজার শিশুর মধ্যে একটি গবেষণা চালায় বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ।

২০২১ সালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, টিকাটি প্রথম বছরে ৮১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৭৯ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ‘টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)’ নামের এই টিকা ৯ মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত সবার জন্য নিরাপদ। টিকা দেওয়ার পর সামান্য জ্বর বা ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা ছাড়া বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি।

গবেষণায় দেখা গেছে, টাইফয়েড টিকা (টিসিভি) বাংলাদেশের শিশুদের জন্য ৮৫% এর বেশি সুরক্ষা দিতে পারে। 

টাইফয়েড যা সালমোনেলা টাইফি (salmonella typhi) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি তীব্র জ্বরের সঙ্গে যুক্ত একটি রোগ। এটি সালমোনেলা প্যারাটাইফির কারণেও হতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত দূষিত খাবার ও পানি দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে।

টাইফয়েডের সংক্রমণ শরীরের রক্ত সংবহন তন্ত্র এবং ভেতরের অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক বা অন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা যায় তাহলে টাইফয়েড জটিলতা তৈরি করতে পারে। এতে মৃত্যু ঝুঁকিও আছে।

টাইফয়েড জ্বর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে (developing country) একটি বিরাট জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বন্যার সময় এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। প্রচণ্ড পেটব্যথা, তিব্র জ্বরে তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ফারেনহাইট, মাথা ব্যথা ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, চামড়ায় লালচে দানা দেখা দেওয়া, শরীর খুব দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড কাশি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ এ প্রথমবারের মতো শুরু  টাইফয়েডের টিকা মাসব্যাপী চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি প্রায় পাঁচ কোটি শিশুদেরকে বিনামূল্যে এক ডোজ টিকা বা ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে। দেশে টাইফয়েডের টিকার এটাই প্রথম ক্যাম্পেইন।

এই টিকা ৯ মাস বয়সি শিশু থেকে শুরু করে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে দেওয়া যাবে। সবার জন্য নিরাপদও। টিকা দেওয়ার পর সামান্য জ্বর বা ইনজেকশনের স্থানে হালকা ব্যথা ছাড়া অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

লেখক: ডা. আয়শা আক্তার

উপ-পরিচালক, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।