নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে তাড়াহুড়ো করে চালু করা হয়, মেট্রোরেল। এতে থেকে যায় নির্মাণ ত্রুটি। এর কারণেই হচ্ছে দুর্ঘটনা। এমনটা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, দক্ষ জনবল নিয়োগ না দিয়ে, শীর্ষ কিছু পদে বসানো হয় আমলাদের। বিষয়গুলো স্বীকার করে ভবিষ্যতেও শঙ্কা দেখছেন, মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
অনিয়মের শহরে কোনোরকমে বেঁচে থাকাই যেখানে বড় কিছু, সেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তার আশা করাটা যেনো দুরাশা ঢাকাবাসীর কাছে। প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় যে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হয়েছে, তার গোড়াতেই ছিল গলদ।
মেট্রোরেল পরিচালনায় গঠন করা হয়েছিল ডিএমটিসিএল। যে কোম্পানির প্রধান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এম এ এন ছিদ্দিক। অথচ, প্রকল্প পরিচালকসহ উর্ধ্বতনদের নিয়োগ কারিগরিভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল, মেট্রোরেলের জাপানিজ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘এনকেডিএম’। কিন্ত সেটি পরিবর্তন করে ২৭ পরিচালকসহ উর্ধ্বতন পদে আসীন হয় আমলারা। ফলে, মেট্রোরেলে রয়ে গেছে প্রযুক্তিগত ত্রুটি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সামশুল হক বলেন, এটা হঠাৎ করে ঘটেনি, ধীরে ধীরে প্রভাব জমেছে। প্রতিটি কম্পনে সামান্য নড়াচড়া হয়, সেটি পর্যবেক্ষণ করার মতো কারিগরি লোক সেখানে ছিল না, কারণ এসব দায়িত্বে নন-টেকনিক্যাল লোক বসানো হয়েছে। ২০১৯ সালে নির্বাচনকে সামনে রেখে মেট্রোরেল উদ্বোধনের লক্ষ্যে তাড়াহুড়ো করা হয়, যদিও জাইকা বলেছিল ২০২২ বা ২০২৩ সালের আগে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব নয়। তখন সেফটি অডিট করা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তা না করেই জনগণের ব্যবহারের জন্য চালু করে দেয়া হয়েছে, যা মারাত্মক ভুল।
গেলো বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেট স্টেশনের কাছে ৪৩০ নম্বর পিলার থেকে পড়ে যায় বিয়ারিং প্যাড। সেসময় একটি তদন্ত কমিটি করে পরীক্ষা করা হয় বিয়ারিং প্যাড। দেড় মাস আগে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বিয়ারিং প্যাডের কোন সমস্যা খুজে পাওয়া যায়নি।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ট্রায়াল রান চালাতে ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগে, কিন্তু আমরা করেছি মাত্র ২ থেকে ৩ মাস। কারণ তখনকার সরকার যা চেয়েছে, তাই হয়েছে। আমার মনে হয়, যারা এটি করেছে এবং যারা নজরদারি করেছে দু’পক্ষই সমানভাবে দায়ী। ডিজাইন করার সময় বাংলাদেশের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য যেমন ধুলো, দূষণ, আর্দ্রতা ও বৃষ্টির বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখিনি। হয়তো তখন আমাদের নিজস্ব সক্ষমতাও যথেষ্ট ছিল না।
নির্মাণকাজে কতখানি গাফলতি হয়েছে, তা নতুন করে তদন্ত করছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এতে ঠিকাদারের দায় থাকলে ক্ষতিপূরণ দাবি করবে ডিএমটিসিএল।