ফরিদপুর জেলার এজিপি ও ল রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্য আইনজীবী মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুই দফা জানাজা শেষে তাকে আলীপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সকাল সাড়ে ১০টায় ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর বারের আইনজীবীরা ছাড়াও বশিরের বন্ধু-বান্ধব, দলীয় নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
বশিরের মরদেহ আসার পর জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আইনজীবীরা জানান, মোসাদ্দেক বশির কখনও মামলার ফি চেয়ে নিতেন না। ভুক্তভোগী যা দিতেন তাই খুশি মনে নিতেন। আর যা আয় করতেন তা অকাতরে খরচ করতেন গরিবদের জন্য। তিনি বেশিরভাগ সময় মামলা না করে উভয়পক্ষকে ডেকে সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। যার কারণে অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
জানাজার আগে বক্তব্য দেন- ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ফরিদপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীরসহ কয়েকজন।
তারা প্রয়াত বশিরের জন্য উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান। প্রয়াত এই আইনজীবীর দ্বিতীয় জানাজা হয় মমিনখার হাট বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন মাধবদীয়া ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখানেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ফরিদপুর শহরের কাছে বদরপুর (মন্ত্রীর বাড়ির কাছে) এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মোসাদ্দেক বশির।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর ফরিদপুর পৌরশাখার যুব বিভাগের সভাপতি ছিলেন। কানাইপুর গিয়েছিলেন জামায়াতের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। মোটরসাইকেলে ফেরার পথে একটি কাভার্ডভ্যান পেছন থেকে মাথার তার ডানপাশে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে তিনিসহ মোটরসাইকেল চালক রাস্তায় ছিটকে পড়েন।
এ সময় তার নাক, কান ও মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। পরে পেছনে থাকা অটোচালক তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের ৫০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বশিরকে মৃত ঘোষণা করেন।
বশিরের সঙ্গে থাকা আইনজীবী মজিবর বলেন, আমরা রাস্তার বামপাশেই ছিলাম। একটি কাভার্ডভ্যান হঠাৎ আমাদের পাস কাটাতে গিয়ে পেছনের দিক থেকে ধাক্কা দিলে আমরা বাম দিকে পড়ে যাই। আমার হাতে-পায়ে আঘাত লাগলেও বশির স্যার মাথায় আঘাত পান। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সাংবাদিকতায় যুক্ত হন মোসাদ্দেক বশির। পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন।পরে ফরিদপুরে আইনপেশায় যুক্ত হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারি আইন কর্মকর্তা (এজিপি) হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। বাবা-মা, ভাই-বোন ছাড়াও স্ত্রী এবং তিন কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে ৬ বছর। মেঝো মেয়ের ২ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ৬ মাস।