Image description

মন্দিরে ঢোল বাজাতে গিয়ে বর্নার সাথে পরিচয়। পরিচয় থেকেই হয় প্রেম। দুই বছরের প্রেম পরিবার মেনে না নেওয়ায় পালিয়ে বিয়ে করেন। ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকুরি করে সেখানেই স্ত্রী নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ৬ মাস পর সৌরভের পরিবার তাদের মেনে নিলে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। স্ত্রী নিয়ে চলছিল সুখের সংসার। তিন বছর বয়সী একটি ফুটফটে ছেলে সন্তানও রয়েছে সৌরভ বর্না দম্পত্তির। সাজানো সুখের সংসার তছনছ করে দেন শাশুড়ী শেফালী রানী। শাশুড়ীর কারনেই তাদের মধ্যে দ্বন্দের শুরু এবং শেষ।

রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোরে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সৌরভ কুমার দাস (২৫) র‌্যাবকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি ফরিদপুর সদরের বঙ্গেশ্বরদী গ্রামের বাসুদেব দাসের ছেলে। গত ২০ অক্টোবর স্ত্রী বর্নাকে হত্যা করে পালিয়ে ছিলেন সৌরভ। এই ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে শশুর বাড়ির এলাকা ফরিদপুরের মধুখালী থানায় ২১ অক্টোবর একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সৌরভকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের বিষয় জানাতে র‍্যাব দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ফরিদপুর।

র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছেন প্রেমে সম্পর্কে তারা বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু আর্থিকভাবে সচ্ছল না থাকায় শুরু থেকেই তার শাশুড়ি শেফালী রানী তাকে মেনে নিতে পারেননি। পরিবারে ছোটখাট সমস্যা হলেই বারবার চেষ্টা করেছেন মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে। এতে সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। তার শাশুড়িও ডিভোর্সি ছিলেন। তার দুই মেয়ে নিয়ে তিনি মধুখালীতে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন। তবে তার চলা ফেরাও ভালো ছিল না। তার জন্য সৌরভের সাথেও সম্পর্ক ভালো থাকতো না। ফলে নিজেদের মধ্যে কখনো তেমন মিলমিশ হয়নি।

জানা গেছে, কিছুদিন আগে স্ত্রী ঝগড়া করে মায়ের কাছে চলে যান। এসময় তার মা শেফালী তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেছিল। এমন চেষ্টা আগেও অনেকবার করেছে। এই খবর পাওয়ায় পর বারবার স্ত্রী সাথে যোগাযোগ করলেও সে মোবাইল নাম্বার ব্লক করে রাখে এতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার দিন মোবাইলে কোন যোগাযোগ না করতে পেরে তিনি রাতে তার স্ত্রীকে দেখতে যান। সেখানে পৌছে ঘরের বেড়ার ফাঁকা দিয়ে বাইরে থেকে তিনি দেখতে পান তার স্ত্রী কোন ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন যা আপত্তিকর ছিল। এরপর তিনি বাড়িতে প্রবেশ না করে সেখান থেকে রাগ করে চলে আসলেও নিজ বাড়িতে না গিয়ে রাস্তার পাশে একটি দোকানে বসে রাত কাটিয়ে দেন। ভোরে দোকান খুললে সেখানে চা খেয়ে সিদ্ধান্ত নেন যেহেতু তার স্ত্রীও সংসার করতে চান না তাই তার সন্তানকে স্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে আসবেন।
সকালে ছেলেকে আনতে শশুর বাড়িতে যান সৌরভ। শাশুড়ি কাজে চলে যাওয়ায় স্ত্রী বাড়িতে একাই ছিলেন। এসময় সৌরভ তার সাথে মোবাইলে অন্য ছেলের সাথে ভিডিও কলিং নিয়ে ঝগড়া করে একপর্যায়ে ছেলেকে কোলে তুলে তার বাড়িতে চলে যেতে রওনা হন। তখন স্ত্রী বর্না পিছন থেকে তাকে কিল ঘুষি মারতে থাকেন ও টেনে ধরেন। তখন সৌরভও স্ত্রীকে আঘাত করেন এবং একপর্যায়ে গলাটিপে ধরেন এতেই শ্বাস বন্ধ হয়ে বর্না মারা যান। তখন ছেলেকে নিয়ে সে সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর সৌরভের বোনের বাড়িতে ছেলে রেখে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এরই এক পর্যায়ে আজ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।

ফরিদপুরের র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার তারিকুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক অশান্তি থেকেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আসামি সৌরভ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। সে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এবং তার শাশুড়ির প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। স্ত্রী হত্যার পর পালিয়ে থাকা সৌরভকে গ্রেপ্তার করতে শুরু থেকেই তৎপর ছিল র‌্যাব। রোববার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে তাকে মধুখালী থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

শীর্ষনিউজ