Image description

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি খোলা চিঠি লিখেছেন শিশু, মানবাধিকার ও জলবায়ুকর্মী ফাতিহা আয়াত। সম্প্রতি ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাবনা’ বিষয়ক স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি ক্ষমতায় এলে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির যুগে টিকে থাকতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগীভাবে গড়ে তুলতে হবে বলে জানান।  ফাতিহা আয়াত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তার এই বক্তব্যের পর খোলা চিঠি লেখেন। চিঠিতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তিনটি মৌলিক বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার বাদি জানান তিনি।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া খোলা চিঠিটি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে দেওয়া হলো-

‘তারেক রহমানকে কে খোলা চিঠি,

আসসালামু আলাইকুম স্যার, 

আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার সাম্প্রতিক বক্তব্যে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুনর্গঠনের যে অঙ্গীকার আপনি করেছেন তা আমার নজরে এসেছে। আপনি বলেছেন, 

“রাষ্ট্রের উন্নয়ন, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা।”

আমি মনে করি এটা কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, এটি এক বাস্তব সত্য। জাতিসংঘ, হার্ভার্ড, কলম্বিয়া, জর্জিয়া ও হিরোশিমা ইউনিভার্সিটিতে বক্তৃতা দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি যে বিশ্বের প্রতিটি উন্নত রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো একটি উদ্ভাবনভিত্তিক, মানবিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা।

আপনার ‘৩১ দফা ঘোষণার’ অংশ হিসেবে শিক্ষা সংস্কারের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য আশাব্যঞ্জক। তবে এই প্রতিশ্রুতিকে কার্যকর করতে অন্তত তিনটি মৌলিক বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার জোর দাবি জানাচ্ছি — 

১। শিক্ষা কারিকুলাম সংস্কার: বাস্তবমুখী ও মানবিক হওয়া প্রয়োজন

আপনার উল্লিখিত বিশেষজ্ঞ টিমের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে কারিকুলাম যেন শুধু প্রযুক্তিনির্ভর না হয়ে সমালোচনামূলক চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধ ও নাগরিক দায়িত্ববোধ গঠনে ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্কে পড়াশোনার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি সেখানে বই মুখস্থ করার পরিবর্তে ছাত্রদের চিন্তা করতে শেখানো হয়, প্রশ্ন করতে শেখানো হয়। বাংলাদেশেও সেই সংস্কৃতি দরকার।

২। কর্মসংস্থানমুখী কারিগরি ও ব্যাবহারিক শিক্ষার সম্প্রসারণ

আপনি বলেছেন, “ব্যাবহারিক ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হতে হবে”। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে সেই শিক্ষা শুধু সার্টিফিকেট নির্ভর নয়, বরং উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানমুখী প্রশিক্ষণ হওয়া উচিত। জাপানের হিরোশিমা ইউনিভার্সিটিতে আমি দেখেছি শিক্ষা ও উদ্ভাবন একসাথে চলছে, গবেষণার ফল বাস্তব জীবনে প্রয়োগ হচ্ছে। আমাদের কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এমন প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা চালু করা প্রয়োজন।

৩। শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্তি

আগামী দিনের শিক্ষানীতি প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত। আমি জাতিসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে “Youth Inclusion in Policy-Making” নিয়ে কথা বলেছি। আমার একটা স্লোগান ছিল এরকম - “Nothing about youth should be decided without youth.” এই নীতি বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে আরও জীবন্ত ও দায়িত্বশীল।
শ্রদ্ধেয় তারেক রহমান স্যার,

আপনার নেতৃত্বে যদি শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো যায় যেখানে প্রতিটি শিশু নিজেকে কেবল পরীক্ষার প্রতিযোগী নয়, বরং ভবিষ্যৎ উদ্ভাবক, চিন্তাবিদ ও নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তবে সেটিই হবে সত্যিকার অর্থে “নিরাপদ রাষ্ট্র” গঠনের প্রথম ধাপ।

আমি বিশ্বাস করি, আপনি শিক্ষাকে রাজনীতির বাইরে রেখে জাতীয় উন্নয়নের মূল হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলবেন।

শিক্ষা বিপ্লবের এই অভিযাত্রায় আমি ও বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সবসময় আপনার পাশে থাকব। থাকব শিক্ষার পক্ষে, উদ্ভাবনের পক্ষে, মানবিকতার পক্ষে।

ধন্যবাদ

ফাতিহা আয়াত’