Image description
 

কোলেস্টেরল শুনলেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে মাখন মাখানো পরাঠা বা ভাজাপোড়া খাবারের ছবি। কিন্তু সত্য হলো, শরীরের জন্য কিছুটা কোলেস্টেরল প্রয়োজন—সমস্যা কেবল তখনই হয়, যখন খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (LDL) অতিরিক্ত মাত্রায় জমে ধমনিতে বাধা সৃষ্টি করে। 

 

এতে হার্টের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে সুখবর হলো, আপনার রান্নাঘরেই আছে সেই সমাধান। প্রতিদিনের পরিচিত কিছু খাবারই স্বাভাবিকভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, হৃদ্‌যন্ত্রকে করে আরও শক্তিশালী, আবার খাবারের আনন্দও বজায় রাখে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন সাতটি খাবার, যেগুলো নিঃশব্দে আপনার শরীরে কাজ করে যায়।

ওটস: সকালের ঢাল

 

ওটস কেন হৃদ্‌স্বাস্থ্যের প্রতীক, তার কারণ লুকিয়ে আছে এতে থাকা দ্রবণীয় আঁশে, যাকে বলা হয় বিটা-গ্লুকান। এই আঁশ হজমের সময় কোলেস্টেরলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীর থেকে তা বের করে দেয়। সকালে এক বাটি ওটসের সঙ্গে সামান্য মধু, বাদাম বা ফল যোগ করলে শুধু পেটই ভরবে না, বরং ধীরে ধীরে কমতে থাকবে খারাপ কোলেস্টেরল।

 

ফ্ল্যাক্সসিড: ক্ষুদ্র বীজ, বিশাল উপকার

ছোট বাদামি বীজগুলো দেখতে তুচ্ছ হলেও, পুষ্টিগুণে ভরপুর। ফ্ল্যাক্সসিডে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও লিগনানস, যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ডাল, দই, স্মুদি কিংবা রুটির ময়দায় মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, গুঁড়ো ফ্ল্যাক্সসিড দেহে ভালোভাবে শোষিত হয়। নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, ত্বক ও চুলও হয় উজ্জ্বল।

রসুন: হৃদয়ের প্রাচীন বন্ধু

রসুন শুধু রান্নায় ঘ্রাণ বাড়ায় না, বরং হার্টেরও অন্যতম রক্ষক। এতে থাকা অ্যালিসিন নামের উপাদান মোট কোলেস্টেরল ও এলডিএল কমাতে ভূমিকা রাখে। কাঁচা রসুন সবচেয়ে কার্যকর, তবে হালকা ভাজা বা রান্না করা রসুনও উপকার দেয়। সকালে এক কোয়া রসুন মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া পুরোনো কিন্তু ফলপ্রসূ ঘরোয়া পদ্ধতি। রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।

অ্যাভোকাডো: মসৃণ অথচ হৃদয়বান

একসময় চর্বিযুক্ত ভেবে অনেকেই এড়িয়ে চলতেন অ্যাভোকাডো। অথচ এতে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। মাখনের বদলে টোস্টে লাগিয়ে খেতে পারেন, সালাদে মিশিয়ে নিতে পারেন, বা চাটনিতে ব্লেন্ড করে ফেলতে পারেন—সবভাবেই এটি হার্টের জন্য উপকারী এক খাবার।

গ্রিন টি: প্রতিদিনের চায়ের স্মার্ট বিকল্প

তৃতীয় কাপ দুধচা খাওয়ার আগে একটু ভাবুন—সবুজ চা আপনার জন্য হতে পারে আরও ভালো বিকল্প। এতে রয়েছে ক্যাটেচিনস, যা প্রাকৃতিক উদ্ভিজ যৌগ হিসেবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ধমনিতে চর্বি জমতে বাধা দেয়। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুই কাপ গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে।

আমলা: প্রকৃতির প্রাকৃতিক ডিটক্স

ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আমলা বা ভারতীয় উসির গুণের শেষ নেই। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে পরিশুদ্ধ রাখে। সকালে এক গ্লাস তাজা আমলার রস, খাবারের পর শুকনো ক্যান্ডি বা এক চামচ চ্যবনপ্রাশ—যেভাবেই খান না কেন, নিয়মিত খেলে ত্বক, হজম ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সবই থাকে চাঙ্গা।

মসুর ডাল ও শিমজাতীয় খাবার: সাধারণ অথচ শক্তিশালী

রাজমা, ছোলা, মসুর—এই সব সাধারণ ডাল ও শিমজাতীয় খাবারেই আছে কোলেস্টেরল-বিরোধী জাদু। এগুলোতে থাকে দ্রবণীয় আঁশ ও উদ্ভিজ প্রোটিন, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ধমনিতে জমে থাকা চর্বি শোষণ হতে বাধা দেয়। নিয়মিত একবাটি ডাল-ভাত বা ছোলার সালাদ খেলে হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে। এ ছাড়া এগুলো রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে, হজমশক্তি উন্নত করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

প্রকৃতির এই খাবারগুলো আপনার শরীরের ভেতরে নীরবে কাজ করে যায়—রক্তনালীগুলো রাখে পরিষ্কার, শক্তি দেয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে, আর হৃদয়কে রাখে তরতাজা। ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টের ওপর নির্ভর না করে, যদি প্রতিদিনের খাবারে এই সাতটি উপাদান যুক্ত করতে পারেন, তাহলে শরীরই হয়ে উঠবে নিজের যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর ডাক্তার।