
নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিধান যুক্ত করতে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঢাকার তেজগাঁওয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানান। সরকারের এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। কোনো কোনো দল স্বাগত জানালেও বলা হচ্ছে কোনো আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, জোট হলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এতে দলগুলোর নিজস্ব সক্রিয়তা এবং বিকাশের সুযোগ থাকবে। তবে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে আরপিওর বিষয়গুলোকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে- স্টেকহোল্ডার তাঁদের মতামত ছাড়া সিদ্ধান্ত হলে এগুলো বাস্তবায়ন হবে না। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে কিছু সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কোনো দলের নিজস্ব প্রতীক থাকা সত্ত্বেও সে দল যদি অন্য প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নেয় , তাহলে তাদের নিবন্ধন নেয়ার যৌক্তিকতা থাকে না। তাই আমরা মনে করি জোটে গেলেও দলগুলোর নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করা উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক হবে না। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই আরপিও চূড়ান্ত করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সমপাদক রাশেদ খান বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা এমন মন্তব্য করেছে শুনেছি। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু স্টেকহোল্ডার তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বিগত সময়ে জোটভিত্তিক নির্বাচনে দলগুলো পারসপরিক আলোচনা করে জোটের প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। তাঁর মতে, এসব বিষয়ে বেশির ভাগ দল কি চায় সেই প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। রাশেদ খান আরও বলেন, জোট করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- নির্বাচনে জয়ী হওয়া। কোনো দল একই প্রতীকে ১৫১ আসনে জয়ী হলে সরকার গঠন করতে পারে কিন্তু ভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করলে সরকার গঠন করা কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণে যেমন সুবিধা আছে, ঠিক তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। বড় দলের নেতাকর্মীরা তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করলে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন তেমনি নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে সবমিলিয়ে নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করলে দলগুলোর জন্য ভালো হবে। তিনি আরও বলেন, কোনো দল দলীয় প্রতীকে জয়ী হলে তাদের শতভাগ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে প্রমাণ থাকবে যে, কোন দল থেকে কতজন জয়ী হয়েছেন। কিন্তু বড় দলের প্রতীকে নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি জোটের প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। নির্বাচনে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমরা সমর্থন করি। কারণ জোটের প্রতীকে নির্বাচন করলে কোনো দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে সেটি বুঝা যাবে না। তাই দলগুলোকে নিজস্ব দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। তবে নির্বাচন কমিশনকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অবশ্যই দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ মানবজমিনকে বলেন, জোট হলেও দলগুলোকে নিজস্ব প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এতে দলগুলোর নিবন্ধন টিকে থাকবে, দলীয় প্রচারণা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি দলের ভিত মজবুত এবং কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। তবে নির্বাচন কমিনশনকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে অবশ্যই দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।