Image description

পটুয়াখালীতে এক নারী পুলিশ কনস্টেবল ও কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনসের ব্যারাক থেকে কনস্টেবল তৃষা বিশ্বাস (২১) এবং পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে রিয়া মনি আক্তারের (১৮) লাশ উদ্ধার করা হয়। 

তৃষা বিশ্বাস পটুয়াখালী পুলিশ লাইনসে কর্মরত আর রিয়া মনি পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। রিয়া মনি দশমিনা উপজেলার মনিরুল ইসলামের মেয়ে এবং তৃষা বিশ্বাস মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের আনন্দ বৈদ্যের স্ত্রী। আনন্দ বৈদ্য বরিশাল মহানগর পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবু নাহিয়ান নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ লাইনসের নারী ব্যারাক সূত্রে জানা যায়, সকালে তৃষা বিশ্বাসকে তার কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে সহকর্মীরা জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এ এস এম নুরুল আখতার নিলয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) আহমাদ মাইনুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাজেদুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেইসঙ্গে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমাদ মাইনুল হাসান বলেন, ‘তৃষা বিশ্বাস ২০২৩ সালের নভেম্বরে পুলিশে যোগদান করেন। তার কক্ষে চিকিৎসকের একটি ব্যবস্থাপত্র পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, তিনি বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় চিকিৎসা নেন। ওই চিকিৎসাপত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা লেখা রয়েছে। চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হননি এবং বিষয়টি কাউকে জানাননি। তিনি যে ওষুধ সেবন করতেন তাও জেলা পুলিশকেও অবহিত করেননি। পরিবারের সদস্যরা আসার পরে আইনি কার্যক্রম শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’ 

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘তৃষা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অপরদিকে কলেজছাত্রী রিয়ার রুমমেট আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘রিয়া রাতে হোস্টেলে ছিল না। কোথায় ছিল তাও জানি না। সকালে রুমে আসে এবং সোয়া ৯টার দিকে আমরা ডাইনিংয়ে যাই। সেখান থেকে ফিরে দেখি ভেতর থেকে দরজা আটকানো। ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় জানালার ফাঁক দিয়ে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকি। রিয়া কখনও কিছু আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেনি।’  

রিয়ার ফুফু ফাতিমা বেগম বলেন, ‘জানি না কী হয়েছিল। আমি ফোনে খবর পেয়ে এখানে এসেছি।’ 

পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোদাচ্ছের বিল্লাহ বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে রিয়া মনির রুমমেটরা নাশতা করতে হোস্টেলের একটি কক্ষ থেকে ডাইনিংয়ে যান। সাড়ে ৯টার দিকে তারা কক্ষে ফিরে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রিয়ার লাশ ঝুলতে দেখেন। পরে তারা বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানান। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে এসে লাশ উদ্ধার করে পটুয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নাহিয়ান নামের এক যুবক রিয়াকে নিজের স্ত্রী দাবি করলে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় আবু নাহিয়ান নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’