
রাজধানীর পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যার নেপথ্যে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক ত্রিভুজ প্রেমের গল্প। পুলিশ জানিয়েছে, জোবায়েদের ছাত্রী ও প্রেমিকা শবনম বর্ষা নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজায়, আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন তার আরেক প্রেমিক মাহির ও তার বন্ধু আইলান। আর এ ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এই ঘটনার সঙ্গে বরগুনার মিন্নির ঘটনার সঙ্গে অনেকাংশ মিল রয়েছে। বর্ষা দুজনের কারো কাছ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না। ফলে সে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজায়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষার্থী জোবায়েদ পুরান ঢাকার বংশাল থানার নুরবক্স লেনের একটি বাসায় ছাত্রীকে পড়াতে গিয়ে হত্যার শিকার হন। নিহত জোবায়েদ বর্ষাকে পড়াতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমিকা বর্ষা একই সময়ে মাহির ও তার জোবায়েদেরে সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলো। ত্রিভূজ প্রেম থেকে বের হতে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজায় বর্ষা। এই ঘটনায় ছাত্রী বর্ষা তার প্রথম প্রেমিক মো. মাহির ও তার বন্ধু ফারদিন আহমেদ আইলানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্ষা একই সময়ে তার গৃহ শিক্ষক জোবায়েদ ও মাহিরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলো। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বর্ষার প্রথম প্রেমিক মাহির বিষয়টি নিয়ে বর্ষাকে চাপ প্রয়োগ করলে সেদিনই গৃহশিক্ষক জোবায়েদ কে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। পরবর্তীতে মাহির ও তার বন্ধু আইলান মিলে চাকু কিনে গত ১৯ অক্টোবর বর্ষার বাসায় অবস্থান নেয়। আর বর্ষা তার শিক্ষক ও প্রেমিক জোবায়েদকে ডেকে আনেন। এরপরই বর্ষার বাসার সিড়ি রুমে জোবায়েদকে বলা হয় বর্ষার থেকে সরে আসতে। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে জোবায়েদকে গলায় পোচ দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।এই ঘটনায় তাদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা তদন্তে পেয়েছি মাহির একই বাসায় ভাড়া থাকতো। মাহির ও বর্ষার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তবে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে দেড় বছর আগে। নিহত জোবায়েদ এক বছর ধরে বর্ষাকে পড়াতো। মেয়েটা জোবায়েদেরে প্রতি দূর্বল হয়ে যায়। মেয়েটার অবস্থা ছিলো এমন যে সে যখন যার কাছে যেতো তার কথা বলতো। এমন অবস্থায় মাহিরকে তার প্রেমিকা বর্ষা বলেছে জোবায়েদকে না সরাতে পারলে আমি তোমার হতে পারবো না। এভাবেই তারা জোবায়েদসে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। মাহিরের এক আঘাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় জোবায়েদের।
মাহিরকে তার মা থানায় হস্তান্তরের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, আসলে আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের নানা ধরনের কৌশল থাকে। আগে চট্টগ্রামের রাউজানে নিয়মিত শিক্ষার্থী অপহরণ করতো, মুক্তিপণ আদায় করতো। আমরা তখন অপহরণকারীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে তাদের ব্যবহার করে সমোজতার চেষ্টা করতাম। ঠিক এভাবেই আমরা মাহিরকে থানায় দিয়ে যেতে চাপ প্রয়োগ করেছি। এটা আমাদের কৌশলের অংশ। স্বেচ্ছায় থানায় হস্তান্তর করা হয়নি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হত্যার বিষয়টি পুরো পরিকল্পনা বর্ষার। বরগুনার মিন্নির ঘটনার সঙ্গে অনেকাংশ মিল রয়েছে। মেয়েটা দুজনের কারো কাছ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না। ফলে সে নিজেই হত্যার পরিকল্পনা সাজায়। হত্যার পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক কোনো বিষয় ছিলো কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মাহির ও বর্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর হত্যার পরিকল্পনা করে। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নেই। এটা ত্রিভুজ প্রেমের ঘটনা।
প্রসঙ্গত, জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষা বর্ষের ছাত্র ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায় কৃষ্ণপুর গ্রামে। গতকাল জোবায়েদকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঢাকাটাইমস