
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। ২০২৫ সালের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ১৮.৯৫ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন। ফলে উচ্চশিক্ষায় ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে শীর্ষ কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীসংকটে পড়বে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল-ডেন্টাল ও বিশেষায়িত কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তির পর শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকবে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভাগীয় ও জেলা শহরের সরকারি কলেজগুলোতেও শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে চান। যেসব শিক্ষার্থী ঢাকায় আসতে চান না, তাঁরা সাধারণত জেলা শহরের সরকারি কলেজগুলোতে ভর্তি হন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করুক। এখান থেকে পাস করা ছেলে-মেয়েরা দেশ গঠনে ভূমিকা রাখুক। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু ভালো করছে। সেখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। তারা র্যাংকিংয়েও বেশ এগিয়ে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় মোট আসনসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা প্রায় ৫১ হাজার, সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পাঁচ হাজার ৩৮০, সরকারি ডেন্টাল কলেজে ৫১৮, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ছয় হাজার ৩৪০, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে এক হাজার ৩৫০, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজে ৩৫০, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে (সম্মান) এক সেমিস্টারে এক লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৯ (বছরে দুই সেমিস্টার হিসাবে পৌনে চার লাখ) আসন রয়েছে।
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে থাকা সরকারি সাত কলেজে ২৩ হাজার ৬৩০ (পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হলে আসন কমবে), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে স্নাতকে (সম্মান) চার লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫ ও পাস কোর্সে চার লাখ ২১ হাজার ৯৯০, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদরাসায় ৪৬ হাজার ৫২৯, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৭ হাজার ৫৯৩, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, মেরিন ইনস্টিটিউটে ৬৬০, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে তিন হাজার ৭৯০, বিশেষায়িত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০০ এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজে পাঁচ হাজার ৬০০ আসন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টাল কলেজ ও বিশেষায়িত কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি। ফলে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীদের আগের মতোই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হবে। কারণ এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হয়। এতে প্রাপ্ত নম্বরই ভর্তির মূল নিয়ামক। এসএসসি-এইচএসসির জিপিএর জন্য খুবই সামান্য নম্বর বরাদ্দ থাকে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন না।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৬। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে ৫৩টির। বাকি তিনটিতেও আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৬। এর মধ্যে ২০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ থাকে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন।
তবে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছেন সাত লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। জিপিএ ৪ থেকে ৫-এর নিচে পেয়েছেন দুই লাখ ৪৭ হাজার ৩৫০ জন। জিপিএ ৩.৫ থেকে ৪-এর নিচে পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৬৫ জন। জিপিএ ৩ থেকে ৩.৫-এর নিচে পেয়েছেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৬ জন। জিপিএ ২ থেকে ৩-এর নিচে পেয়েছেন এক লাখ ছয় হাজার ৫৯ জন।
অন্যদিকে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। আর জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।
এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। ২৮ নভেম্বর আইবিএ ইউনিট; ২৯ নভেম্বর চারুকলা ইউনিট; ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট; ১৩ ডিসেম্বর কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট এবং ২০ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিক্যালে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় ১২ ডিসেম্বর। গুচ্ছভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আগামী বছরের শুরুতে হতে পারে।
অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত ডুয়াল ও ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ডুয়াল সেমিস্টার জানুয়ারি ও জুলাই মাসে শুরু হয়। আর ট্রাই সেমিস্টারের বিষয়গুলোতে স্প্রিং (জানুয়ারি-এপ্রিল), সামার (মে-আগস্ট), ফল (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর)—এই তিনবার ভর্তির সুযোগ রয়েছে।