Image description
♦ আট দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রাখার প্রস্তাব ♦ এআইয়ের অপব্যবহার রোধ ও ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ♦ পুলিশের সঙ্গে থাকবে বডিওর্ন ক্যামেরা ♦ গণভোট, নির্বাচন ভন্ডুল কেন্দ্রে আগুন, ব্যালট পোড়ানো, কালো টাকা ছড়ানো নিয়ে আলোচনা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আট দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রাখার প্রস্তাব এসেছে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি বৈঠকে। এর মধ্যে ভোটের মাঠে সেনাবাহিনীর সদস্য থাকবে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ। পুলিশের সদস্য থাকবে দেড় লাখ। এ ছাড়া আনসার-ভিডিপির প্রায় সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ সদস্য রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসছে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে গণভোট, নির্বাচন ভন্ডুল করার শঙ্কা, কেন্দ্রে আগুন, ব্যালট পোড়ানো, কালো টাকা ছড়ানোর শঙ্কা এবং এআই চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ভোটের জন্য কোনো ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ। গতকাল তিন ঘণ্টাব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতিমূলক আইনশৃঙ্খলা সভা হয়। আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের একগুচ্ছ আলোচ্যবিষয় তুলে ধরে সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে এ বৈঠক সূচনা ছিল এবং ধাপে ধাপে আরও বৈঠক হবে বলে জানান তিনি। সচিব দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভোটের উপযোগী রয়েছে।

সভায় বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝুঁকি দেখছে কি না এবং আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি আছে সেটা কতটুকু ভোটের জন্য উপযোগী? জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনের সময়সীমাটা তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত ইসির এখতিয়ারাধীন। আমাদের আলোচনার পরিমিতিটা এটুকু ছিল। বাকিটুকু নিয়ে আমাদের আলোচনার এই মুহূর্তে সুযোগ নেই এবং আমরা করিওনি। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো ধরনের উদ্বেগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

ভোটে আট দিন নিরাপত্তা সদস্য : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী, আনসার, অন্য কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গতকাল মতবিনিময়ে ডেকেছিল ইসি। ভোট কেন্দ্র থেকে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়, ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণে বডিওর্ন ক্যামেরা- পুলিশের অন্তত ১৪টি বিষয় ছিল গতকালের আলোচনায়। ইসি সচিব বলেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মোটামুটিভাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মূলত পাঁচ দিনের ডেপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম করা হয়। সেখানে একটা প্রস্তাব এসেছে- এটা যেন আট দিন করা হয়। নির্বাচনের আগে তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে চার দিন। আমাদের ইনিশিয়াল প্রোগ্রামিং ছিল পাঁচ দিন। এখন প্রস্তাবনাটা আসছে আট দিন। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখব।

এআই নিয়ে কমিশন আরও পর্যালোচনা করছে। ইতোমধ্যে পাওয়া ঘটনা চিহ্নিত করার অভিজ্ঞতা ধরে এগোতে চায় ইসি।

সচিব বলেন, আর্মি এভিয়েশন, এয়ারফোর্স এভিয়েশন হেলিকপ্টার করে নির্বাচন সামগ্রী পরিবহনের করবে। যেসব জায়গায় সেটি হবে সেখানে  হ্যালিপ্যাডগুলো আমরা যেন একটু ব্যবস্থা করে রাখি। যাতে সহজে উড্ডয়ন এবং অবতরণ করা যায়।

সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে ইসির। এক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী আগামী নির্বাচনে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারে থাকবে নাকি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে থাকবে? জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, এটার ব্যাপারে আরপিওটা সংশোধন হয়ে আসুক। দুটো মতামতই আছে। ভোটের প্রচারে ড্রোনের ব্যবহার নিষেধ রাখা হয়েছে। ইসি সচিব বলেন, ইউজ অব ড্রোনের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, নির্বাচনি প্রচারণায় ড্রোন ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করবেন। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে ইলেক্টলেটল ইনকয়ারি কমিটি তফসিল ঘোষণা থেকে কাজ শুরু করবে।

ভোটে কোন বাহিনীর কত সদস্য, বডিওর্ন ক্যামেরা : আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে আইজিপির তথ্য তুলে ধরে ইসি সচিব জানান, পুলিশের দেড় লাখ কর্মিবাহিনী থাকবে ভোটে। সবচেয়ে বেশি বাহিনীর সদস্য আসবে আনসার ভিডিপি থেকে। স্বরাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বডিওর্ন ক্যামেরা থাকবে; ড্রোনের ব্যবস্থা থাকবে। কাজেই আমাদের ভিজিলেন্সটা অনেক বেশিই হবে। সবগুলো বাহিনী তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার একটা কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যের কথা বলেছে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ। আনসারের সংখ্যাটা আরেকটু বেশি। আনসার-ভিডিপি প্রায় সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ সদস্য।

আগামী ভোটে সব মিলিয়ে কত সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য থাকবে এবং তাদের বাজেট বরাদ্দ চূড়ান্ত হবে আরও পরে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশন প্রত্যেকটা ইউনিটে একটা বাজেট লাগবে, তাদের খরচ আছে প্রশিক্ষণের সঙ্গে প্রত্যেকটা খরচ আছে সেগুলো আমাদেরকে  দেবেন। এটা ইলেকশন বাজেটের সঙ্গে সম্পর্কিত, সে বাজেটটা করব। নির্বাচন পরিচালনার কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয় নিরাপত্তায়। এবার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

ইসি সচিব বলেন, লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর বিষয়ে উনারা বলেছেন যে কিছু অস্ত্র ৮৫% পর্যন্ত তারা রিকভারি করেছেন। আরও কিছু অস্ত্র এবং কিছু গোলাবারুদ এখনো পর্যন্ত বাইরে আছে।

আইনশৃঙ্খলা সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাদের মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফট্যানেন্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিমানবাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, নৌ বাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, বিজিবির মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, র‌্যাব, এসবি ও সিআইডির শীর্ষ কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।