Image description
এসসিএনসিএল বৈঠকে অনুমোদন

অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, তারা বিদেশি ঋণ গ্রহণে সতর্ক। চট করে ঋণ এখন আর নিচ্ছেন না। কিন্তু বাস্তবে উচ্চ সুদে (অনমনীয়) দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি (দেশীয় মুদ্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা) ঋণ নিচ্ছে সরকার। একটি বৈদেশিক ব্যাংকসহ তিনটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে। যা সম্প্রতি অনমনীয় ঋণ (এসসিএনসিএল) সংক্রান্ত সর্বশেষ বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা নিজেই। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের অর্থ একদিকে বাজেট ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবেলায় সাময়িক স্বস্তি দেবে। তবে ভবিষ্যতে বৈদেশিক দায়ের চাপ বাড়বে এমনটি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সরকার প্রয়োজনে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে নমনীয় (স্বল্প সুদে) এবং অনমনীয় (উচ্চ সুদে) বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে। কিন্তু ২০২৬ সালে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে স্বল্প সুদের ঋণ কম মিলছে। তাই দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

এর আগে এসসিএনসিএলের ৩৯তম বৈঠকে ব্যাংক খাত সংস্কারসহ সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়নে উচ্চ সুদে ১৮৬ কোটি ডলার (দেশি মুদ্রায় প্রায় ২২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা) ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মূলত বিদেশ থেকে সার, জ্বালানি তেল আমদানি এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে এ ঋণ নেওয়া হয়।

সর্বশেষ অনুমোদনকৃত ঋণে ময়মনসিংহের একটি ব্রিজ, ঘাটতি বাজেট সহায়তা, ঢাকা ও খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহের নেটওয়ার্ক, চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।

তবে এসসিএনসিএলের বৈঠকে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও পরিশোধে সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে ঋণ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ঋণের সুদহার আগে বৃদ্ধি পেয়েছিল। বর্তমান স্বল্প সুদের ঋণের প্রস্তাব আগের তুলনা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সে দিকেও নজর রাখতে হবে। এছাড়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন, যাতে যথা সময়ে সুফল পাওয়া যায়। তিনি সুফল পেতে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে সরকার উদ্বেগ আছে। এটি প্রকাশ পেয়েছে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্যে। সম্প্রতি তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, বিদেশি ঋণের চাপ নিতে চাচ্ছি না। ঋণ নিয়ে সতর্ক আছি। বাজেট সহায়তাও কমিয়ে আনা হবে। এখন টেকসই ঋণের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, চট করে ঋণ নেওয়া হবে না। কারণ এর চাপ জনগণের ওপর পড়বে। ঋণ না নিয়ে নিজেরাই চেষ্টা করব রাজস্ব আহরণ বাড়তে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মেলে। ফলে প্রথম ছয় মাসে ঋণও বেশ নেওয়া হয়। কিন্তু পরিশোধের ক্ষেত্রে সেভাবে বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়েনি। অথচ রিজার্ভের ডলার দিয়েই বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়। তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে এই সরকার। এর মধ্যে ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্সের দুই বিলিয়ন ডলারসহ শেভরন ও ভারতের বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানির ঋণও রয়েছে।

সরকারে ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন (এসসিএনসিএল)’ বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অনমনীয় (উচ্চ সুদে) ঋণগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) থেকে ২৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ঋণ ব্যয় হবে ময়মনসিংহ বিভাগে পরিবেশবান্ধব একটি ব্রিজ নির্মাণে। গ্রেস পিরিয়ড পাঁচ বছরসহ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২৫ বছর।

বাজেট সহায়তা হিসাবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে নেওয়া হবে ৪০ কোটি ডলার। ৩৫ বছরে পরিশোধযোগ্য এ ঋণের গ্রেস পিরিয়ড হচ্ছে পাঁচ বছর। এছাড়া ঢাকা ওয়াসার পানি পরিবেশসম্মতভাবে সরবরাহের জন্য ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) থেকে ৭ কোটি ইউরো অর্থাৎ ৮ দশমিক ১৯ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে। সুদের হার ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। যা ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

পৃথক প্রকল্প সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্প বাস্তবায়নেও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) থেকে ৯ কোটি ইউরো বা ১০ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে। এ ঋণের সুদের হার ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পরবর্তী চার বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এডিবি থেকে নেওয়া হবে ১৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

সূত্র আরও জানায়, নর্থওয়েস্ট ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক মর্ডানাইজেশন প্রকল্পের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে ৯ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজ রেলপথে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য এডিবি থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৫০ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। এ ঋণ সম্পর্কে বৈঠকে রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি ট্রাপ-এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডর বরাবর রেল যোগাযোগ জোরদারে অবদান রাখবে।