Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি রাষ্ট্র সংস্কার আর জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে রাজনীতির মুখ্য কর্মসূচিতে রাখলেও দলটির একঝাঁক নেতা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আগেভাগেই মাঠে সক্রিয় হয়েছেন।

তাদের কেউ কেউ দাবি করছেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও দল থেকে ‘এক ধরনের সবুজ সংকেত’ তারা পেয়েছেন। কেউ কেউ বক্তব্য, টকশোতে তার সম্ভাব্য আসনের কথা প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও আগ্রহী হয়ে নাম ও আসন ধরে সোশাল মিডিয়ায় ফটোকার্ড প্রচার করছে।

প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব নাম আসছে তা ‘সঠিক নয়’ এমনটি বলা যাবে না। তবে এটা ঠিক যে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা এখনও প্রকাশ করিনি।“

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একটি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হওয়ার আগে আমরা এ দিকে মনোযোগ দিতে চাচ্ছি না।”

 

এ বিষয়ে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করার ব্যাপারে কাজ করছি।”

উত্তরা এলাকা (ঢাকা-১৮) থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার ইঙ্গিত দিয়ে নাসীর বলেন, “যেসব এলাকায় গণঅভ্যুত্থানের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে উত্তরা তার মধ্যে একটি। সেখান থেকে নির্বাচন করার জন্য আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেখানে আমাদের সংগঠন আছে। বিভিন্ন স্তরে কাজ চলছে।”

গত কয়েকদিনে এনসিপির কয়েক ডজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা গেছে।

আখতার হোসেন রংপুর-৪ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জুলাই পদযাত্রার সময়ই ঘোষণা করা হয়েছিল।

সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে বৃষ্টির মধ্যে খালি পায়ে উঠান বৈঠকে আখতার হোসেনের দেওয়া একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে। সেখানে তিনি শাপলা প্রতীকের প্রার্থী হিসাবে এলাকাবাসীর সমর্থন চেয়েছেন।

নির্বাচনী মাঠের পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে আখতার বলেন, “আমি বেশ আশাবাদী। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষজন নিজ খরচে এসে এনসিপির সভাসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন, বক্তব্য শুনছেন।”

আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় কিছু ব্যানার-পোস্টারও দেখা যাচ্ছে।

মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার উপজেলায় নির্বাচনের জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। গত কয়েক মাস ধরে এলাকায় উঠান বৈঠক ও উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে হাসনাতকে।

আরেক মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঢাকায় দলের কাজ করার পাশাপাশি নিজ এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।

সারজিস বলেছেন, “আমি আমার মত করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কেউ চাইলেই নির্বাচনে জিততে পারবে না। আমি প্রচার চালিয়ে যাব। যেদিন এলাকাবাসী আমাকে যোগ্য মনে করবে, সেদিন আমাকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য বানাবে।”

তাসনীম জারা ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আসানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান প্রার্থী।

সারোয়ার তুষার বলেন, “মঈন খানের ভালো ইমেজ থাকলেও এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর মানুষ বিরক্ত। সেই দিক থেকে অনেকেই এনসিপির সঙ্গে কাজ করতে চাইছেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা জনমত গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ হাতিয়া উপজেলা থেকে নির্বাচন করতে এক বছরের বেশি সময় ধরে তৎপরতা চালাচ্ছেন। নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জন্য ফেরি, সি-ট্রাক, নদীর ঘাটকে যাত্রীবান্ধব করা, পারাপারের জন্য জেটি স্থাপন করা, নদী ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ স্থাপনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ব্যবস্থা করেছেন।

এলাকায় ভূমিহীন মানুষের মাঝে নতুন চরের জমির বন্দোবস্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন মাসউদ। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।

 

 

দলের যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম সাইফ মোস্তাফিজ সিরাজগঞ্জ-৬ থেকে নির্বাচন করবেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন টিভির আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন সাইফ মোস্তাফিজ।

যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন পটুয়াখালী-২ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন। এই আসনে বিএনপি থেকে কোনো প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি। জামায়াতে ইসলামী থেকে শিবিরের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

শহীন বলেন, “নির্বাচন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবং সে অনুযায়ী এলাকার মানুষের নানান রকম সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। বিভিন্ন দল থেকে নেতাকর্মীরা এনসিপির সঙ্গে রাজনীতি করার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।”

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ঢাকার দুটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে ক্ষণে ক্ষণে বদলাতে থাকা রাজনৈতিক চিত্রের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নেতার আসন প্রকাশ করা হয়নি।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ঢাকা-৯, যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসাইন ঢাকা-১৩, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এসএম শাহরিয়ার ঢাকা-৫, যুগ্ম সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন ঢাকা-৪, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীন ঢাকা-৬, সংগঠক মো. রাসেল আহমেদ ঢাকা-১, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন নওগাঁ-৫, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন পটুয়াখালী-২, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ-৪, নয়ন আহম্মেদ কুষ্টিয়া-২ থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এ ছাড়া জয়নাল আবেদীন শিশির কুমিল্লা-১০, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, আবু সাঈদ লিয়ন নীলফামারী-৩/৪, ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, মোল্যা রহমতুল্লাহ্ বাগেরহাট-৩, ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু খুলনা-১, সাকিল আহমাদ মেহেরপুর-২, আশিকিন আলম ময়মনসিংহ-৯ থেকে নির্বাচনের প্রস্ততি নিচ্ছেন বলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেন, “আমি তো প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে সেটা দেখার বিষয়। আনুষ্ঠানিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলে তখন বলা যাবে।“

আবু সাঈদ নিওন, নিজাম উদ্দিন, এস এম শাহরিয়ার, কেন্দ্রীয় সংগঠক নয়ন আহম্মেদ নির্বাচনে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন।