Image description

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ইআরএফ-এর সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সমুদ্রগামী জাহাজশিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ জায়েদী সাত্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

নৌসচিব আরও বলেন, ‘তিন টার্মিনালের মধ্যে পানগাঁও ছেড়ে দিতে কিছুটা সময় নেওয়া হবে। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) অক্টোবরের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটিরও কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক ইস্যু আছে, ভৌগোলিক ইস্যু আছে। আমরা মনে করি, সেটি বড় কোনো বিষয় হবে না। শ্রীলংকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে কোনো সমস্যা না হলে এখানে হবে কেন?’

চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়ানো হচ্ছে উলে­খ করে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও যেটা নেই, আমরা তা করছি। বন্দরের মধ্যে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩টি গেট আছে, এর মধ্যে স্ক্যানিং মেশিন আছে মাত্র ছয়টি। এর মধ্যে আবার ৩-৪টি নষ্ট থাকে। এভাবে বন্দর চলতে পারে না। এজন্য আমরা বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়াতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে যাবে।’

ব্যবসায়ীরা বন্দর বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরোধিতা করছেন। এরপরও বন্দর কি ছেড়ে দেওয়া হবে-এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘তারা আগে এমন নানা কথা বলেন, কিন্তু পরে পরিস্থিতি দেখে আর কথা বলেন না।’

বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, এজন্য খরচ বাড়ানো হবে, এটা বহন করতে পারবেন কি না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেবার মান বাড়ানো হলে দ্রুত সেবা দিয়ে বন্দরে অযথা জাহাজ বসিয়ে রাখা হ্রাস করে ড্যামারেজ কমিয়ে আনতে পারলে বাড়তি খরচ দিতে কোনো সমস্যা হবে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আজম জে চৌধুরী বলেন, ‘জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে একই দেশে দুই ধরনের পতাকার অস্তিত্ব রয়েছে। আইন অনুযায়ী সরকারি টাকায় কেনা পণ্য শুধু দেশের পতাকাবাহী জাহাজ বহন করতে পারবে। সরকার মালিকানাধীন জাহাজ বোঝাতে সরকারি পতাকাবাহী জাহাজের কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে দেশের বেসরকারি জাহাজ কোন দেশের পতাকা বহন করে?’

মূল প্রবন্ধে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়দী সাত্তার বলেন, ‘দেশে জাহাজভাঙা শিল্প ও ছোট জাহাজ নির্মাণ খাত বড় জাহাজ নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। জাহাজ রপ্তানির জন্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ আছে। এগুলো ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারলে কার্যাদেশ আরও বাড়বে। এজন্য প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে জাহাজ নির্মাণশিল্প উপযোগী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য এখন ইতিবাচক রয়েছে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে জাহাজ নির্মাণশিল্প দুই বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করা সম্ভব।’