Image description

এক পুলিশ সদস্যকে আঘাত করে গত ১৯ জুন ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে যায় হত্যা মামলার আসামি শরীফুল ইসলাম। ওই আসামি গত ছয় বছর ধরে কারাগারে ছিলেন। এদিন তাকে আদালত থেকে গারদে নেয়ার সময় সুযোগ বুঝে তিনি পালিয়ে যান। এদিন সে পালিয়ে যাওয়া সিসিটিভি ক্যামেরার ছবিতে দেখা যায় তার হাতে ছিল না হাতকড়া, পায়ে ছিল না ডান্ডা বেড়ি, হত্যা মামলার এই আসামির কোমরে কোনো দড়িও ছিল না। ছিল না পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাও। আদালত প্রাঙ্গণ খোলামেলা ও দুর্বল নিরাপত্তার কারণে পালিয়ে যায় তিনি।

তবে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়া বা আসামি ছিনতাইয়ের এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার একই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০২২ সালে ঢাকার আদালত থেকে কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে যান। সেই সময়েও জঙ্গিদের ক্ষেত্রে হাজতখানা থেকে আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় দুই হাতকড়া পরানো, বুলেটপ্রুভ জ্যাকেট পরানো ও হেলমেট মাথায় দেওয়ার বিষয়টি মানা হয়নি।

একই বছরে ২৮ এপ্রিল মানিকগঞ্জের কলেজশিক্ষার্থী মনির হোসেন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বাদশা মিয়াকে আরেক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে আনা হলে আদালত থেকে পালিয়ে যান তিনি। একই বছরে ২৩ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে সাইফুল ইসলাম নামে মাদক মামলার এক আসামি পালিয়ে যান। এর আগে ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতি মামলার আসামি হারুনুর রশিদ ওরফে সুমন পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় হাজতের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই বদরুজ্জামানসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। 

এভাবেই প্রতিনিয়ত নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই শত শত আসামিকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়েই আসামি হাজিরার কাজ চলে আসছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, তবে প্রচলিত নিয়মও মানছেন না আদালত পুলিশের সদস্যরা। ‘বিশেষ সুবিধা নিয়েই হাজতখানায় গিয়ে আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে দেয়া, আসামি কাঠগড়া থেকে হাজতখানা বা প্রিজন ভ্যানে নেওয়া-আনার সময়েও অনায়াসেই আলাপ চালানোর সুযোগ দেয়া হয়। এ ছাড়া আদালতের সিঁড়িতেও বা হাঁটতে হাঁটতে আসামিরা প্রকাশ্যেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন। দিনের পর দিন এমন অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই চলছে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ। দিনের পর দিন চলমান এসব ঘটনা একটা সময় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে সবার চোখে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটক ও তার আশপাশ এলাকায় সিসি ক্যামেরা খুবই কম। চার বছর আগে বিশেষ মনিটরিং করার জন্য ১৩০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর আবেদন আসলেও বাস্তবায়ন হয় খুব কম। যে ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছিলো তার বেশিরভাগই এখন অকার্যকর।

সূত্র জানায়, প্রসিকিউশনের নিয়ন্ত্রণে আদালত প্রাঙ্গনে সিসি ক্যামেরা আছে মাত্র ৩৫ থেকে ৩৮টি। যা বিশাল এই অঞ্চলের জন্য খুবই অপ্রতুল বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জজ কোর্ট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬শতাধিক আসামি হাজির করা হয় আদালতে। এর জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ থাকে মাত্র ৫১০ জন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন ছুটিতে থাকে এ ছাড়া বিভিন্ন দাপ্তরিককাজে নিয়োজিত থাকে অন্যরা ফলে ভিআইপি আসামি ব্যতিত খুন ডাকাতি বা দাগি আসামিদের ক্ষেত্রে বিশেষ ফোর্স ব্যবহারের সুযোগ থাকে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, এখনকার বেশিরভাগ পুলিশ গ্রাম থেকে আসা। এদের অভিজ্ঞতাও কম। প্রতি সপ্তাহে এদের ট্রেনিং প্রয়োজন। নিরাপত্তা বলয়ে আরো বেশি তৎপরতা প্রয়োজন। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারেক জুবায়ের বলেন, আমরা হাজতখানায় আরও বেশি নিরাপত্তা জোরদার করছি। নিরাপত্তার জন্য আলাদা সেল গঠন করেছি। আমাদের প্রধান সমস্যা জনবল সংকট।