
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক সংকট আমলে নিয়ে সরকারের কাছে নতুন একটি কাঠামো প্রস্তাব করবে এই কমিশন। গত জুলাই মাসে গঠিত এই পে-কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তবে নির্বাচিত সরকার এসেই নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করবে বলে জানা গেছে।
প্রশ্ন হলো নতুন বেতন কাঠামোয় কতটি স্কেল হবে? কমিশন সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, সার্বিক বেতন কাঠামো নির্ধারণের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য কমিয়ে আনার চিন্তা করা হচ্ছেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেড কমানোর মাধ্যমে পেছনের সারিতে থাকা সরকারি চাকরিজীবীরা বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে।
বর্তমানে সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি প্রতিষ্ঠান (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ) কিংবা বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতি বেতন কাঠামো কেমন চায়, সে বিষয়ে উন্মুক্ত মতামত নিচ্ছে কমিশন। এ ক্ষেত্রেও গ্রেড পুনর্বিন্যাস করার বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।
একইভাবে অন্য আরেকটি ক্যাটাগারিতে এমন প্রশ্নই করা হয়েছে একটু ঘুরিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত কি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? বিদ্যমান বেতন কাঠামোয় কি ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
সার্বিক বিষয়ে পে কমিশনের এক সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য দূর করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কমিশন। সে জন্য বিদ্যমান ২০টি গ্রেড পুনর্বিন্যাস করে মোট গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বদিউল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, তারা ২০টা গ্রেড ভেঙে ১২টা করার পক্ষে।
তিনি আরো বলেন, ৭ম পে কমিশনে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড ছিল কিন্তু অষ্টম বেতন কমিশনে এসে এটা বাদ দেওয়া হয়েছে, আমাদের তো নির্ধারিত সময় পর পদোন্নতি হয় না। অফিসাররা নির্ধারিত সময় পদোন্নতি পায়, পদ না থাকলে তাদের পদোন্নতি দেয়। কিন্তু আমাদের পদ শূন্য না হলে পদোন্নতি দেয় না। সে কারণে আমাদের টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড অবশ্যই থাকতে হবে।
গ্রেড কমলে কারা বেশি লাভবান এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেড কমলে সাধারণত নিচের গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তাদের বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ, একটি গ্রেড থেকে আরেকটি গ্রেডে পৌঁছাতে যে সময়টা লাগত, সেটি লাগছে না। তাছাড়া সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে আসবেন সংশ্লিষ্টরা।
পে স্কেল-২০১৫ ঘেঁটে দেখা গেছে, চলমান বেতন স্কেলে ৮ম (২২ হাজার) এবং নবম গ্রেডে (২৩ হাজার) বেতনের ব্যবধান মাত্র ১০০০ হাজার। একইভাবে ২০তম ও ১৯তম গ্রেডের মধ্যে বেতনের ব্যবধান মাত্র ২৫০টাকা। আর ১৭তম (৯০০০) ও ১৮তম গ্রেডের (৮৮০০) মধ্যে মূল বেতনে ক্ষেত্রে ২০০টাকা এবং এবং ১২তম ও ১৩তম গ্রেডের ব্যবধান মাত্র ৩০০টাকা। কম ব্যবধান থাকা এসব গ্রেডগুলোকেই ভেঙে সংখ্যা কমিয়ে আনা যায় কিনা- এমন আলোচনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিশনে।
এ দিকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন/ সমিতিগুলো। বাড়িভাড়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন কি না, তাও জানাতে পারবেন তারা।
এ উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়ে একটি অনলাইন জরিপ শুরু করেছে জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫। গত ২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ জরিপ চলবে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেশের যে কোন নাগরিক এতে অংশ নিতে পারবেন।
জরিপে সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি প্রতিষ্ঠান, অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতি—এ চার শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জরিপে অংশ নিতে পারবে। অ্যাপ্লিকেশনের লিংকটি জাতীয় বেতন কমিশনের ওয়েবসাইটে (paycommission 2025.gov.bd) পাওয়া যাবে।