Image description
 

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখার ২০১ সদস্য বিশিষ্ট বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করেছে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠনটির প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয়েছে পদ পাওয়া নেতাদের। তবে এই নেতাদের বেশিরভাগেরই নেই ছাত্রত্ব, এমনকি এক যুগ আগে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। পদ পেয়েছেন বিবাহিত, সন্তানের বাবা, ও বিদেশে পলাতক অনেকেই।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ফখর উদ্দিন মানিক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালেয়র (জবি) কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসসি) বিভাগের ৬ষ্ঠ ব্যাচের এ শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশন সভাপতি ছাত্রলীগের রাজনীতির পাঠ চুকান ২০১৯ সালে। সোনালী ব্যাংকে চাকরি নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সোনালী ব্যাংক স্বাধীনতা ব্যাংকারস পরিষদের প্রচার সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন তিনি।

তবে পরবর্তীতে অনিয়মের অভিযোগে চাকরি চলে যায় এই ব্যাংক কর্মকর্তার। পরে মতিঝিল সোনালী ব্যাংকে ঠিকাদারির কাজ করেন ৫ আগস্ট পর্যন্ত। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথমে নিজে পালিয়ে লন্ডন চলে যান এবং পরে তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীও লন্ডনে যান। সেখানে তাদের এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এই আওয়ামী লীগ নেতা জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ নিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রথম জানান দেন।

 

এদিকে পদ পেয়েছেন ভোলা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসিবুর রহমান বাঁধন। পাঁচ বছর আগে জবির রাজনীতি ছেড়ে ভোলা জেলায় তিনি পদ নেন ২০২২ সালে। ২০২৪ সালে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনও করেন তিনি। পরবর্তীতে বিয়ে করেন এবং হন ছেলে সন্তানের বাবা। এই বিবাহিত ও ছেলের সন্তানের বাবা পাঁচ বছর পর জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ নিয়েছেন বলে ফেসবুকে জানান দিয়েছেন।

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অন্যতম একজন নেতা ছিলেন ইমরুল কায়েস শিশির। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির পাঠ চুকান ২০২২ সালে। দীর্ঘদিন রাজনীতি করে প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। যোগদান করেন একটি বেসরকারি কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার পদে। তিনি এখন পদ নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটিতে।

উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি দেন মো. নবাব হোসেন। সাবেক জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেলের রাজনীতি করতেন তিনি। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে রাসেলের কমিটি যাওয়ার পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন। এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ের আশায় ছাত্রলীগের পদ নিয়েছেন তিনি।

জবি ছাত্রলীগের আরেক নেতা কবির হোসেন। আরও কয়েক বছর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির পাঠ চুকান। তিন বছর আগে করেছেন বিয়ে, একটি সন্তানও আছে তার। বিয়ের পর তিনি একটা রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সাবেক সদস্য নিয়েছেন জবি ছাত্রলীগ সহ-সভাপতির পদ।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জবি ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ইবরাহিম ফরাজীও ৫ই আগস্টের পর থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব তিনি। এ ছাড়া শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনও বিদেশে অবস্থান করছেন বলে গেছে। বর্তমানে একটি বিদেশী নম্বর ব্যবহার করে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি। তবে ফেসবুকে তাকে সরব দেখা যায় না।

উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সন্ত্রাসী হামলাসহ বিগত ১৬ বছর গুম-খুনের অভিযোগে নিষিদ্ধ হওয়ার বছর না পেরোতেই প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ।

গতবছর জুলাই অভ্যূত্থান এর পর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। বর্তমানে সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা ভারতে এবং অন্যান্য নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে অবস্থান করছেন। এছাড়া দেশে যারা রয়েছে তারা রয়েছেন আত্মগোপনে।