Image description

এই মুহুর্তে প্রশাসনের বহুল উচ্চারিত প্রশ্ন, কে হচ্ছেন হচ্ছেন জনপ্রশাসন সচিব? গত ১৬ দিনেও এ প্রশ্নের সমাধান মেলেনি! ফলে একদিকে সচিবালয়ে কৌতুহল বাড়ছে, অন্যদিকে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন সচিব প্রশাসনের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর একটি। প্রশাসনিক কাঠামোতে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ পদ ধরা হলেও প্রশাসন পরিচালনায় একটি নাম্বার ওয়ান পদ হিসেবে অবিহিত।

এছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ মন্ত্রণালয় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানকে সরিয়ে দেওয়ার ১৬ দিন পরও নতুন সচিব নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। প্রায় দুই দশকে এতদিন জনপ্রশাসন সচিব পদটি শুন্য থাকেনি। অথচ এ মন্ত্রণালয়টি রাষ্ট্র পরিচালনার লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত।

জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল, প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পরপরই সচিব নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। ইতোমধ্যে চারদিন হতে চললেও জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ না হওয়ায় শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবাক হচ্ছেন।

তারা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের অফিসার বাছাই ও পদায়নে ব্যস্ত থাকার বদলে মন্ত্রণালয় নিজেই গতিহীন হয়ে আছে।

প্রশাসনের কর্মরত কর্মকর্তারা চাচ্ছেন, নিয়মিত কর্মরত কর্মকর্তাদের কেউ জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। অন্যদিকে সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সচিবদের মধ্য থেকে কোনো একজনকে জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগের চিন্তা করলেও সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করতে পারছে না।

চুক্তিভিত্তিকদের মধ্যে আলোচনায় যারা

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গণি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদের নাম পরবর্তী জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে আলোচনায় আছে।

এর মধ্যে ভূমি সচিবের চাকরি জীবনে তিন বছরের বেশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এপিডি উইংয়ে কাজের অভিজ্ঞতা আছে।

সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা মনে করেন, চুক্তিভিত্তিক সচিবদের মধ্যে জনপ্রশাসন চালানোর জন্য ভূমি সচিবের গ্রহণযোগ্যতা অন্যদের চেয়ে বেশি। গত মে মাসে সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলন সামাল দেওয়ার ব্যাপারেও সরকার তাকে দায়িত্ব দিয়েছিল।

অন্যদিকে সিনিয়রিটির দিক থেকে এগিয়ে আছেন স্বরাষ্ট্র সচিব। তবে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার পরও তাকে জনপ্রশাসনে বিবেচনার চিন্তা প্রাথমিকভাবে সরকারের ছিল না। ভূমি সচিবের বিষয়ে একটি রাজনৈতিক দলের আপত্তির কারণে স্বরাষ্ট্র সচিবকে জনপ্রশাসনে আনার চিন্তা করছে সরকার।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ড. নাসিমুল গণি রোববার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরণের কোনো আলোচনা আমার জানা নেই, আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম।'

এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

ভূমি সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণ পদের কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন, এটা সরকারের সর্বোচ্চ পরযায়ের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করার সুযোগ নেই। সরকার যেখানে দায়িত্ব দেবে সেখানেই কাজ করতে হবে।'

এর বাইরে চুক্তিভিত্তিক সচিবদের মধ্যে সাত নং ভবনের একটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবালয়ের বাইরের একটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আলোচনায় আছেন। যাদের দুইজনই প্রভাবশালী দুই উপদেষ্টার মন্ত্রণালয়ে আছেন।

নিয়মিতদের মধ্যে আলোচনায় যারা

নিয়মিত কর্মরতদের মধ্যে বর্তমানে প্রশাসনের সবচেয়ে পুরনো ১০তম ব্যাচের চারজন সচিব আছেন। যাদের দুইজনই ওএসডি, অন্য দুইজনের মধ্যে সরকারের গুড বুকে আছেন একজন নারী সচিব। তিনি নিয়োগ পেলে প্রথমবার নারী জনপ্রশাসন সচিব পাবে মন্ত্রণালয়।

প্রশাসনের ১১তম ব্যাচে থাকা ১২ জন সচিবের মধ্যে পাঁচজন আগের সরকারের সময় সচিব পদোন্নতি পেয়েছিলেন। বাকি সাত জনের মধ্যে সচিবালয়ের চার নং ও সাত নং ভবনের দুই সচিবকে ইন সার্ভিস কর্মকর্তারা সবচেয়ে যোগ্য মনে করেন।

প্রথমজনের চাকরির মেয়াদ শেষ দিকে হওয়ায় তাকে জনপ্রশাসন সচিব করলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। এ ব্যাচের আরেকজন কর্মকর্তা আলোচনায় থাকলেও ছাত্রজীবনে বিশেষ একটি সংগঠনে সম্পৃক্ততার কারণে একটি রাজনৈতিক দলের অস্বস্তি আছে।

বর্তমান প্রশাসনে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ মোট ২৮ জন সচিব আছেন ১৩তম ব্যাচের, যাদের প্রায় অর্ধেক গত সরকারের আমলে সচিব পদোন্নতি পেয়েছিলেন। অন্তর্বতী সরকারের আমলে এ ব্যাচের সচিব পদোন্নতি পাওয়াদের মধ্যে সাত নং ভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সচিব সরকারের বিবেচনায়  আছেন। এছাড়া সচিবালয়ের বাইরে থাকা একটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নামও আলোচনায় আছেন, যিনি গত সরকারের আমলে সচিব পদোন্নতি পেয়েছিলেন।

জনপ্রশাসন সচিব সাধারণত জ্যেষ্ঠতম ব্যাচ থেকে থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়, চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের কাউকে দায়িত্ব না দেওয়া হলে ১১ বা ১৩ ব্যাচের কাউকেও জনপ্রশাসন সচিব পদে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আরেকটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র সচিবকে জনপ্রশাসন সচিব করার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হলে, সপ্তাহ থেকে দশদিনের জন্য আপাতত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংশ্লিষ্ট কাউকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে সূত্রটি জানায়, স্বরাষ্ট্র সচিবের কিছু অসমাপ্ত কাজ শেষ করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই (স্বরাষ্ট্র) মন্ত্রণালয়ে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নির্ধারণ করতে কয়েক দিনের সময় লাগতে পারে। তবে নাসিমুল গণির বাইরের কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নতুন জনপ্রশাসন সচিবের দেখা মিলতে পারে।