Image description
 

সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানান প্রকৃতির মানুষ রয়েছে। তবে কিছু মানুষের ভিন্নধর্মী জীবনযাপন অনেকেরই নজর কাড়ে; যা তাকে ব্যতিক্রমী মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচয় করিয়ে দেয়। তেমনি একজন মানুষ দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের দড়িখামার মহল্লার বায়েজিদ আলী। 

 

পোশাকের রঙের স্বকীয়তাই তাকে ভিন্নধর্মী একজন মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। হয়ে উঠেছেন সেলিব্রেটি। হাজারও মানুষের ভিড়ে এখন এলাকায় আলাদা একটি নাম ও পরিচয় বায়েজিদ।

বায়েজিদ আলী ব্যতিক্রমী মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করার কারণ তার পোশাক। সাম্প্রতিক মানুষের মুখে মুখে ব্যাপক আলোচিত ‘সাদা সাদা, কালা কালা’ গানটিই যেন তার যাপিত জীবনের দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাদা এবং কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙের পোশাক পরেন না তিনি। যখন তিনি সাদা পোশাক পড়েন, তখন হাতঘড়ি, কোমরের বেল্ট, জুতা থেকে মোবাইল ফোনটিও থাকে সাদা রঙের সঙ্গে ম্যাচিং করে। আর যখন কালো পোশাক পরেন, অনুরূপ পরিধানগুলোও পরেন কালো রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। শুধু তাই নয়, এই দুই রঙের সঙ্গে মিল রেখে কিনেছেন সাদা ও কালো রঙয়ের কবুতরও। 

পেশায় লেবার সর্দার বায়েজিদের অবসর সময় কাটে কবুতরসহ পশুপাখি যত্নের মাধ্যমে। ভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধানের কারণে বাড়ির বাইরে বের হলেও ব্যতিক্রমী বায়েজিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন অনেকেই। 

পার্বতীপুর পৌর এলাকার অধিবাসী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বায়েজিদ নামে এই মানুষটি কখনো সাদা পোশাক পরতে, আবার কখনো কালো পোশাক পরতে। যখন তিনি সাদা পোশাক পরেন তখন তার শরীরে আপাদমস্তক পরিধেয় থাকে সাদা। আর কালো পরলে সবই থাকে কালো রঙের। এজন্য যখন তিনি যেদিকে চলাফেরা করেন, তখন তার দিকে তাকিয়ে থাকেন অনেকেই। সেই সঙ্গে তার আচার আচরণেও বেশ খুশির কথা জানিয়েছেন তিনি। 

বায়েজিদ আলী প্রায় ৩৫ বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পাশের জমিরহাট ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে। বর্তমানে তিনি ৩ কন্যা ও এক ছেলের জনক। স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার স্বামীকে সাদা অথবা কালো ছাড়া অন্য রঙের পোশাক পরতে দেখিনি। বাবার বাড়ি থেকে জামাইকে অন্য কোনো রঙের পোশাক কিনে দিলেও তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এখন আর কেউ তাকে সাদা কালো ছাড়া কিছু উপহার দেন না। পোশাকের ক্ষেত্রে তার এই স্বকীয়তায় পরিবারের পক্ষ থেকেও বেশ উৎসাহ দেওয়া হয় বলে জানান হোসনে আরা। 

পঞ্চাশোর্ধ বয়সি বায়েজিদ আলী বলেন, বুঝ হওয়ার পর থেকেই সাদা বা কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙের পোশাক পরিনি। এই দুটি রঙই আমার পছন্দ। এছাড়া অন্য কোনো রঙের পোশাক পরলেই অস্বস্তি লাগে। 

তিনি বলেন, যে যাই ভাবুক, যতদিন বেঁচে থাকব- এই দুটি রঙ ছাড়া আর অন্য রঙের পোশাক পরব না। মৃত্যুর সময়েও তো সাদা পোশাকেই কবরে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

ভিন্নধর্মী এই পোশাক ও পরিধেয় বস্তুর কারণে এরই মধ্যে এলাকায় তার নাম-ডাক পড়ে গেছে। তার শখ এখন তাকে সেলিব্রেটি বানিয়ে দিয়েছে। অল্পশিক্ষিত হলেও মানুষের সঙ্গে চলাফেরা ও ব্যবহারে এলাকাসহ উপজেলাবাসীর কাছে তিনি খুব পরিচিত। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি একজন ব্যতিক্রমী মানুষ।