এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন কোটা এক হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার করলে বেসরকারি হজ ও ওমরাহ এজেন্সির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করেন হাবের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ও চ্যালেঞ্জার ট্র্যাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ গোলাম সরওয়ার। তিনি বলেন, এবার প্রথমে ৫০০ হজযাত্রী নিয়ে লিড এজেন্সি করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। ১৫-২০টি এজেন্সি মিলে লিড এজেন্সি করতে হয়েছে। সৌদি সরকার সর্বনিম্ন কোটা এক হাজার নির্ধারণ করে দেয়ার পর ৩০-৪০টি এজেন্সি মিলে একটি লিড এজেন্সি করতে হয়েছে। এতে মাত্র ৭০টির মতো এজেন্সি ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। আগামী বছর দুই হাজার হাজী নিয়ে লিড এজেন্সির কথা বলা হয়েছে। তাহলে তখন মাত্র ৩৫টি এজেন্সি ব্যবসা করতে পারবে। বর্তমানে এজেন্সি আছে ১২ শতাধিক। বাকি এজেন্সিরা কী করবে? তারা সাব এজেন্সি হয়ে যাবে। এভাবে এক সময় তাদের ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাবে।
নয়া পল্টনের চ্যালেঞ্জার ট্র্যাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের কার্যালয়ে নয়া দিগন্তকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন সৈয়দ গোলাম সরওয়ার। তিনি হাবের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি। সভাপতি পদের একবার নির্বাচন করেছিলেন। আওয়ামী আমলের ওই নির্বাচনে তাকে জোরপূর্বক হারিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে এজেন্সি মালিকদের দাবি। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তিনি একটি প্যানেল প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সৈয়দ গোলাম সরওয়ারের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
নয়া দিগন্ত : গত বছর এজেন্সিদের সর্বনিম্ন কোটা ২৫০ ছিল। এবার ১০০০ করা হয়েছে। আগামী বছর ২০০০ হবে। হাজীদের সেবার ক্ষেত্রে এটি কতটা প্রভাব ফেলবে?
সৈয়দ গোলাম সরওয়ার : বিষয়টি খুবই আশঙ্কার। দেশে ১২ শতাধিক বেসরকারি এজেন্সি আছে। দেশের বেশির ভাগ হাজী বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যান। এবার যেমন ৮৭ হাজার ১০০ হজযাত্রীর মধ্যে ৮১ হাজার ৯০০ জনই বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে যাচ্ছেন। বাকি ৫২০০ যাচ্ছেন সরকারি মাধ্যমে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার হাজী যাওয়ার কথা থাকলেও তার অর্ধেক যাচ্ছে। মানুষ ভালো সেবা পাওয়ার আশায় বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে হজে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সরকারও এজন্য বেসরকারি এজেন্সিগুলোর অনুমোদন দিয়েছে। এজেন্সিগুলো তাদের সক্ষমতা অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক হাজীর সেবা দিয়ে থাকে। সেজন্য এবার অনেক এজেন্সির মাধ্যমে ৩০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত হাজী নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু এবার একবারে একটি এজেন্সিকে এক হাজার হাজীর সেবা দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কোনো একক এজেন্সিরই এক হাজার হাজী নেই। ফলে তাদের ৩০-৪০টি এজেন্সির হাজী এক জায়গায় এনে লিড এজেন্সি গঠন করতে হচ্ছে। যা খুবই সমস্যা তৈরি করেছে। পরে হজে গিয়েও অনেক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। লিড এজেন্সির হঠাৎ সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে যেমন প্রশ্ন থেকে যায় একইভাবে অন্যান্য এজেন্সির সংগৃহীত হাজীর সঠিক সেবা পাওয়া নিয়েও আশঙ্কা থেকে যায়।
নয়া দিগন্ত : গত কয়েক বছরে হাজীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?
সৈয়দ গোলাম সরওয়ার : মূলত হজের খরচ আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। গত আওয়ামী লীগ আমলে হঠাৎ করেই হজের সব খরচ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এজন্য মানুষ এখন হজের থেকে ওমরাহ করছেন বেশি। গত বছর এবং চলতি বছরও ৪০ হাজারের বেশি হজযাত্রীর কোটা খালি রয়ে গেছে।
নয়া দিগন্ত : হজে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এটা হাজীদের সেবার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায়। মধ্যস্বত্বভোগী বিলোপের উপায় কি?
সৈয়দ গোলাম সরওয়ার : মধ্যস্বত্বভোগী হজের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীরা হাজীর কাছ থেকে টাকা নিয়েও এজেন্সি মালিককে দেন না। একবারে বেশি টাকা পেয়ে তারা অনেক সময় লোভ সামলাতে পারেন না। অনেকে টাকা জমা না দিয়ে পালিয়ে যান। ফলে শেষ দিকে এসে হাজীর নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা দেখা যায়। আমাদের হাজীগুলো আসেন সারা দেশ থেকে। এজেন্সিগুলোর সারা দেশে অফিস খোলার অনুমতি নেই এবং বেশির ভাগ এজেন্সির সক্ষমতাও নেই। এ জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভর করতে হয় এজেন্সি মালিকদের। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক মধ্যস্বত্বভোগী গ্রামের সহজ সরল হাজীদের সাথে প্রতারণা করে থাকেন। এ প্রতারণা বন্ধে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। যারা হজে যান তাদেরও সচেতন হতে হবে। হজযাত্রীদের সরাসরি এজেন্সির সাথে চুক্তি ও লেনদেন করা উচিত।
নয়া দিগন্ত : সামনে এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের নির্বাচন। আপনি একটি প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচিত হলে কী করতে চান?
সৈয়দ গোলাম সরওয়ার : আমি হাবের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি। এর আগে সভাপতি পদেও নির্বাচন করেছি। তখন আওয়ামী লীগ আমলে আমাকে জোরপূর্বক হারিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবার একটি প্যানেলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি। মূলত এজেন্সি মালিকদের চাহিদার কারণে আমাকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। বর্তমানে এজেন্সি মালিকরা নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন। বিগত কয়েকটি মেয়াদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। হাব পল্লী নিয়ে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। এজেন্সি মালিকরা এর সমাধান চান। আমি নির্বাচিত হলে হাবকে একটি গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব। সদস্যদের কল্যাণে কাজ করব।